চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার দুটি সড়ক দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় কার্পেটিং ও পাথর উঠে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। এর ফলে বেহাল ওই দুই সড়ক দিয়ে জনগণের চলাচলে ভোগান্তি চরমে উঠেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-
কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কার্পেটিং ও পাথর উঠে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। বৃষ্টি হলেই সড়কে জমে হাঁটুপানি, কোথাও কোথাও কাদা পানি জমে আছে। এক বছর আগে কর্তৃপক্ষ কার্পেটিং সড়কে ইট দিয়ে সংস্কার করলেও সেই ইট বিপজ্জনকে পরিণত হয়। যানবাহন চলতে গিয়ে বিকল হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। সড়কটি বেহাল হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পাঁচ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন বন্দর সেন্টার-আনোয়ারা মোহছেন আউলিয়া সড়ক এটি। চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন এই সড়ক বন্দর সেন্টার মহালখাঁন বাজার থেকে টানেলের সুড়ঙ্গ ব্রিজের রাস্তা পেরিয়ে জুঁইদন্ডী ইউনিয়ন পর্যন্ত দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে সড়কের বিভিন্ন অংশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার কার্পেটিং উঠে বড় বড় গর্তে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা বন্দর সেন্টার, দক্ষিণ বন্দর, বটতলী রুস্তম হাট, আইরমঙ্গল ও খুরুস্কুল এলাকায়।
জানা যায়, গত বছর সওজ বিভাগ সড়কের বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে যাওয়া স্থানে ইট বসিয়ে সংস্কার করলেও ওই ইট এখন আরও বিপদে ফেলেছে চালক-যাত্রীদের। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, জিপ, ট্রাক, বাসসহ রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াত করে। এছাড়া সকাল ও বিকালে কেপিজেডের হাজার হাজার শ্রমিকবাহী গাড়ি চলাচল করে। সড়কের বিপজ্জনক এমন পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনাও। গত দুই মাসে শ্রমিকবাহী জিপ ও অটোরিকশা উল্টে চার দুর্ঘটনায় ২০ জন লোক আহতের ঘটনাও ঘটেছে।
দক্ষিণ বন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। এতে গাড়ির ছিটকে পানি গায়ে পড়ার কারণে রাস্তায় বের হলে নোংরা পানিতে কাপড় নষ্ট হয়।
গাড়িচালক আবদুর রহমান জানান, সড়কে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। যাত্রী দুর্ভোগ ছাড়াও এই সড়কে চলাচলকৃত গাড়ি প্রতি মাসে মেরামত করতে হয়। ডেলিভারি মহিলাদের দুর্ভোগ আরও চরমে।
সড়ক সংস্কারের বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, এ মুহূর্তে সড়কটি মেরামতের কোনো বরাদ্দ তাদের কাছে নেই। একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ করা হবে।
পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, পুরো রাস্তার কার্পেটিং উঠে গেছে। দুই পাশে অ্যাপ্রোচের মাটি সরে গিয়ে রাস্তায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে পুকুরের পাশের পেলাসেটিং। স্থানে স্থানে দেবে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। এমন অবস্থায় রাস্তাটি দিয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার পূর্বধলা-ঘাগড়া রাস্তার এমন বেহাল দশা বিরাজ করছে। রাস্তাটির এমন বেহাল দশায় চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দাবি করছেন রাস্তাটি দ্রম্নত সংস্কারের।
পূর্বধলা সদর থেকে ঘাগড়া ইউনিয়নের ঘাগড়া বাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬টি গ্রামের মানুষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী উপজেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে থাকেন। এদের মধ্যে পার্শ্ববর্তী ধোবাউড়া উপজেলার লোকজনও রয়েছে। এই রাস্তার আশেপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কয়েকটি বাজার। এ রাস্তায় এক সময় ঘাগড়া থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত সরাসরি বাস চলাচল করলেও বর্তমানে রাস্তার ভগ্নদশার কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। একই কারণে সিএনজি ও মাহিদ্র পরিবহণগুলোও বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পুরো রাস্তার কার্পেটিং উঠে গেছে। কালডোয়ার, কুমারখালী, দুধী এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মাটি দেবে যাচ্ছে। হাটধলা সুনিল মার্কেট, মেঘশিমুলসহ বিভিন্ন জায়গায় ছোট বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। মেঘশিমুল ব্রিজসংলগ্ন ও দুধি এলাকায় রাস্তার দুইপাশের অ্যাপ্রোচের মাটি সরে গিয়ে রাস্তায় ভাঙন সৃষ্টি হয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া রাস্তাটি মাত্র ১০ ফুট প্রশস্ত হওয়ায় বড় বাস বা ট্রাক মুখোমুখি হলে একে অপরকে সাইড দিতে পারে না।
এ রাস্তায় চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক বিজয় চন্দ্র দে জানান, ভগ্নদশার কারণে এই রাস্তায় গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হয়। কয়দিন পরপর অটো নষ্ট হয়ে যায়। সময় বেশি লাগার কারণে অধিকাংশ যাত্রী অটোতে না উঠে মোটর সাইকেলে আনাগোনা করেন। ফলে যাত্রী খরায় ভুগতে হয় তাদের। তাছাড়া রোগীদের নিয়ে আনাগোনা করা একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
ঘাগড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোতালিব জানান, ঘাগড়া থেকে পূর্বধলা উপজেলা সদর পর্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। বর্তমানে রাস্তাটির ভগ্নদশার কারণে মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তাই রাস্তাটির প্রশস্ততা বাড়িয়ে দ্রম্নত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
পূর্বধলা এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাওন আহমেদ জানান, পূর্বধলা থেকে ঘাগড়া পর্যন্ত রাস্তাটির দুই পাশে প্রচুর গাছ রয়েছে। আর এই গাছগুলো রাস্তার প্রশস্ততার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পরেও দুই পাশে ১ ফুট করে ২ ফুট বৃদ্ধি করে রাস্তাটি সংস্কারের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আরসিআইপি প্রজেক্টের আওতায় সারাদেশে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময় কাজটি বাস্তবায়ন হতে পারে।