৫ আগস্ট সকালে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সোহেল রানা (২৬)। পাশের সড়কে তখন ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে পুলিশ। তা দেখে সোহেল মাকে ফোন করে জানায় 'মা এখানে খুব গ্যাঞ্জাম হচ্ছে। শুনলাম নাটোরেও হচ্ছে। তোমরা সাবধানে থেকো।'
এ সময় ঢাকার বাইপাইলে নিজের ভাড়া বাসার চারতলার জানালার পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় গুলি এসে লাগে তার পেটে। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে এনাম মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর রাত ৯টায় তার মৃতু্য হয়।
রানা নাটোরের সিংড়া উপজেলার শোয়াইড়বালান পাড়ার মতলেব আলী-রেহেনা বেগম দম্পতির ছেলে। তিনি ঢাকার বাইপাইলে পোশাক কারখানার সুপারভাইজার পদে চাকরি করতেন। পাশেই একটি বাসার চারতলায় ভাড়া থাকতেন। অবিবাহিত রানা ছিলেন বাবা-মা ও তিন ভাই-বোনের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার প্রতি মাসে পাঠানো ১০ হাজার টাকায় সংসারটা ভালোই চলছিল।
সোহেল রানার বাড়ি গিয়ে কথা হয় তার বাবা-মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে। মা রেহেনা বেগম বলেন, 'আমার ছেলে ছোট বেলা থেকেই সংসারি। ডিপেস্নামা পাস করে ৭ বছর ধরে ঢাকায় চাকরি করত। সর্বশেষ রোজার ঈদে বাড়িতে আইছিল। বাড়তি ইনকামের জন্য কোরবানির ঈদে বাড়িতে আসেনি। ১০ তারিখ (আগস্ট) আসার কথা ছিল। ৫ তারিখ গ্যাঞ্জামের গুলি আসি লাগে আমার বেটার পেটে। অনেকক্ষণ চিকিৎসা পায়নি। পরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পরই মারা যায়। পরের দিন ওর লাশ আসে বাড়িতে।'
বাবা মতলেব আলী বলেন, 'ছোট বোনের বিয়া না হওয়ায় আমার ছেলি বিয়ে করেনি। ওর বিয়ের জন্য খরচপাতি জোগাচ্ছিল। অথচ অসময়ে চলি গেল। ওর কোনো সাধই মিটল না। এ কষ্ট আমি কাউকে বোঝাতে পারব না। তবে ওরা জান দিয়া দেশটাকে বাঁচাইছে। এডায় শান্ত্বনা। দেশডা ভালোভাবে চললে ওর জানডা শান্তি পাবি।'