নবীনগরে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে প্রথমবারেই বাজিমাত

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে প্রথমবারের মতো মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেই সফলতার মুখ দেখেছেন কৃষক। তাই এ পদ্ধতির চাষাবাদ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলার বীরগাঁও, নাটঘর, বগডহর এলাকায় ২ হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার বীরগাঁও, নাটঘর, বগডহর এলাকায় ঋষড়ড়ফ জবপড়হংঃৎঁপঃরড়হ ঊসবৎমবহপু অংংরংঃধহপব চৎড়লবপঃ (ঋজঊঅচ) প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় মালচিং পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষাবাদ করা হয়েছে। মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে পোকামাকড় আর গাছের গোড়ায় আগাছা না জন্মানোয় বাড়তি পরিচর্যা করতে হচ্ছে না চাষিদের। একই জমিতে বছরে তিনবার এই তরমুজ চাষাবাদ করা যায়। দ্রম্নত সময়ে তরমুজের ফলন ভালো হয়। তরমুজ অন্যান্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভজনক ও বিক্রিতে ঝামেলা না থাকায় দিন দিন তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। উপজেলা কৃষি অফিস তরমুজ চাষে বীজসহ সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে। ইতোমধ্যে জমি থেকে তরমুজ তুলে বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি তরমুজ দেড় থেকে তিন কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। সাধারণত শীতকালে চাষ করে মার্চ-এপ্রিল মাসে জমি থেকে তরমুজ উত্তোলন করা হতো। বর্তমানে উন্নতমানের কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সারা বছরই তরমুজ চাষাবাদ করা হচ্ছে। এতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ফসল। উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের বড়হিত গ্রামের কৃষক শামীম আহমেদ জানান, প্রথমবারের মতো সূর্যডিম জাতের তরমুজ আবাদ করেছি। ২০ শতক জমি থেকে ইতিমধ্যে ৯২ হাজার টাকা তরমুজ বিক্রি করেছি। আরও ৫০ হাজার টাকা বিক্রয় করার সুযোগ আছে। অতি অল্প সময়ে এই ফসল আবাদে অনেক কৃষকের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। উপজেলার বগডগর গ্রামের কৃষক আবদুস ছালাম জানান, 'পরিত্যক্ত অনাবাদি জায়গায় কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষাবাদ করেছি। এ সময় তরমুজ চাষ করা যায়, এই ধারণাই আমার জন্য নতুন। এখন পর্যন্ত ভালো ফলন হয়েছে। আগামীতে আরও বেশি পরিমাণে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ করব।' নবীনগর পূর্ব বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আবু নোমান জানান, 'সূর্যডিম ও বাংলালিংক জাতের তরমুজের চাহিদা বাড়ছে। পুকুর পাড়, পরিত্যক্ত জায়গায় আবাদের জন্য আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। অসময়ে এই ধরনের চাষাবাদে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিটি তরমুজ ২ থেকে ৩ কেজি ওজনের হচ্ছে। এই তরমুজের বাজারমূল্য বেশ ভালো।' উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, উপজেলায় এই বছর প্রায় ২ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি জলবায়ুর সঙ্গে অভিযোজন করে এগিয়ে যাচ্ছে। মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যেই তরমুজ বিক্রয় উপযোগী হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আবাদ কৌশল সম্পর্কে কৃষি বিভাগ মাঠ দিবস ও কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের হাতেকলমে শিখিয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে এটি টেকসই আবাদ হিসেবে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। তিনি আরও জানান, কৃষকদের গ্রীষ্মকালীন তরমুজের বীজ, মালচিং পেপার ও পরিচর্যা বাবদ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের সব ধরনের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। তাই উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। ফল হিসেবে তরমুজের চাহিদা রয়েছে অনেক। তরমুজে ৯২ শতাংশই পানি। শরীরে পানি ও তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।