যেখানে হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ!

পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে সেবা প্রদান

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

শরীয়তপুর সদর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরের জরাজীর্ণ ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স -যাযাদি
জনবল সংকটে ধুঁকছে দক্ষিণাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের ক্যাটাগরি ৩-এর ৫০ শয্যা ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটি। এখানে ২০৮ পদের ১৪৪টি খালি। প্রথম শ্রেণির ৩৫টি পদের মধ্যে চিকিৎসকদের ১৩টি পদ শূন্য। ৪ জন কনসালটেন্টসহ হাসপাতালে মাত্র ২২ জন মেডিকেল কর্মকর্তা দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। শুধু তাই নয়, জরাজীর্ণ হাসপাতাল ভবনের ছাদে ফাটল এবং নিয়মিত খসে পড়ছে পলেস্তারা, যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রোগীদের অভিযোগ পরিত্যক্ত ভবনের হাসপাতালটি নিজেই যেখানে অসুস্থ সেখানে সেবা নিতে এসে মরা ছাড়া আর কিছুই না। অন্যদিকে, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উত্তীর্ণ হলেও সেবার পরিধি এখনো বাড়ানো হয়নি। যার কারণে এলাকার জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার প্রায় আড়াই লাখসহ আশপাশের উপজেলার লোকের চিকিৎসার জন্য প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় জনগণ। এতে উপজেলার রোগীদের বাধ্য হয়ে শরীয়তপুর ও ঢাকার দিকে ছুটতে হচ্ছে। \হঅন্যদিকে প্রচন্ড গরমে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে জায়গা না থাকায় মেঝেতে চাদর বিছিয়ে নিচ্ছেন চিকিৎসা। বিশেষ করে প্রচন্ড তাপদাহে শিশু বা নারীদের জটিল কোনো সমস্যা দেখা দিলেই চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে বা ঢাকায় যেতে হয়। এতে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন দরিদ্র রোগীরা। হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, ৫০ শয্যার ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের দুটি ভবন। একটিতে রোগীদের ভর্তি চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। সেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। এবং হাসপাতালের ডাক্তার রুম ও নার্সরুম ও রোগীদের বেডের উপরেও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। এর আগে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে গণপূর্ত বিভাগ। অন্যদিকে চিকিৎসকের ৩৫টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ২২ জন। শূন্য পদ রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে মেডিসিন, গাইনি, শিশু, অর্থোপেডিকস, কার্ডিওলজি, চক্ষু ও অ্যানেসথেসিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসকের পদ শূন্য। শুধু তাই নয়, শূন্য রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ২৪ পদের মধ্যে ৭টি শূন্য। এর মধ্যে দুটি ওয়ার্ড বয়, দুটি অফিস সহায়ক, একটি মালি ও চারটি পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ শূন্য আছে। রয়েছে টেকনিশিয়ানের সংকটও। হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে আউটডোরে ৬ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে এবং ইনডোরে ৬০ থেকে ৭০ জন ভর্তি হচ্ছে। এসব রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্মরত চিকিৎসক-নার্সদের। জানা যায়, হাসপাতালে এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে তা চালু হয়নি। রোগীদের বাধ্য হয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে ডায়াগনস্টিক বা ক্লিনিক থেকে। এতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। হাসপাতালটিতে রয়েছে পুরনো মডেলের একটি এক্স-রে মেশিন ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি, কিন্তু নেই কোনো টেকনিশিয়ান। যার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। ফাতেমা, জসিম হোসেন ও বারেক মোলস্না নামে কয়েকজন ভর্তি রোগী বলেন, 'আমরা তিন দিন হয় হাসপাতালে ভর্তি। কিন্তু হাসপাতালের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ছে। বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকি নিয়েই সেবা নিচ্ছি। হাসপাতাল যেখানে নিজেই অসুস্থ, সেখানে আমরা কীভাবে সেবা নেব। শিগগিরই হাসপাতালটি মেরামত করা উচিত।' ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম ভালোভাবে চলছিল। কিন্তু পুরনো ভবনটিতেই বেশি জরুরি সেবা দেওয়া হয়। ভবনটির ছাদসহ বিভিন্ন পিলার ভেঙে পড়ছে। যার কারণে ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। ভবনটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত জানাবেন। যাতে এখানে একটি নতুন ভবন করা হয়।