মুষলধারে বৃষ্টিতে জনজীবন স্থবির
বাড়ছে বাতাসের তীব্রতা
প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশে কয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টি ও বজ্রপাত অব্যাহত। তবে এখন শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। একই সঙ্গে বাতাসের তীব্রতাও বেড়েছে এবং পদ্মা-মেঘনা নদীর ঢেউ। টানা বৃষ্টির কারণে জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ অনেকটা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরে গত কয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টি ও বজ্রপাত অব্যাহত। তবে এখন শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি।
শনিবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাসাবাড়ি থেকে বের হয়নি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হয়েছে হকার, রিকশা চালক ও শ্রমিকরা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও সকাল ১০টার পরে খুলেছে। অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে লোকজন।
সদর উপজেলার অটোরিকশা চালক নুরুল ইসলাম বলেন, 'সকালে ভাড়া নিয়ে রামপুর ইউনিয়নের রাড়িচর এসেছি। এখন বৃষ্টির কারণে কোনো দিকে যেতে পারছি না। অনেক অটোরিকশা চালক বৃষ্টির কারণে ঘর থেকেও বের হতে পারছে না।
সদর উপজেলার বাগাদি ইউনিয়নের বাসিন্দা আলম মিয়া বলেন, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকায় এর আগের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কিছুদিন বৃষ্টি কম থাকায় পানি বাড়ি-ঘর থেকে নেমে যায়। এখন আবার পূর্বের অবস্থা তৈরি হচ্ছে। আগের বার ফসল ও মাছের খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
শহরের পুরান বাজার বাণিজ্যিক এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল আহসান বলেন, সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি। দুপুর হলেও অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারছে না। টানা বৃষ্টিতে জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। সড়কও অনেকটা ফাঁকা। রিকশা ও অটোবাইকের সংখ্যা খুবই কম।
একই এলাকার বাসিন্দা শেখ আল মামুন বলেন, টানা বৃষ্টি ও বাতাসের তীব্রতায় নদীতে ঢেউ বেড়েছে। পানি বাড়েনি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় জেলেরা নদীতে নামেনি। পুরো নদীই ফাঁকা।
শহরের নিউ ট্রাক রোড এলাকার ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ বলেন, গত রাত থেকে টানা বৃষ্টি। সকালে দোকান খুলেছি দেরিতে। কারণ ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। একান্ত দরকার ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। দুপুর ১২টার পর থেকে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে, গত এক সপ্তাহের অধিক চাঁদপুরে বিদু্যৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৭ ঘণ্টা বিদু্যৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। আরও করুণ অবস্থা পলস্নী বিদু্যৎ সমিতির। গ্রামাঞ্চলে বিদু্যৎ সরবরাহ থাকে ৭-৮ ঘণ্টা।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চপর্যবেক্ষক শাহ মো. শোয়েব বলেন, শুক্রবার রাত ১২টা হতে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত চাঁদপুরে ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। আজকে চাঁদপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫.৬ ডিগ্রি সেলিসিয়াস।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীতে বৃষ্টির কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ অনেকটা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
পটুয়াখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য মতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন এমন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে বৃষ্টির কারণে শহরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জরুরি কাজ ছাড়া এদিন অনেকেই ঘরের বাইরে বের হতে দেখা যায়নি। যারাও বা বাইরে বের হয়েছেন সড়কে রিকশা কিংবা অটোরিকশা না থাকায় তাদেরকে যানবাহন পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
অপরদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর ও নদী উত্তাল থাকায় মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করতে দেখা গেছে। বৃষ্টির কারণে আমন ধানের চারা রোপণ করতে গিয়েও বিপাকে পড়েছেন অধিকাংশ কৃষকরা। বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি বেশি থাকায় বীজ রোপণ করতে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক কৃষক বীজতলা থেকে বীজ তুলতে পারছেন না।
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারেও শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়েছে থেমে থেমে বৃষ্টি। শনিবার সারাদিন এ অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে আড়াইহাজার পৌর বাজারসহ সব হাটবাজারে অনেকেই দোকানপাট খুলতে পারেনি। থমকে গেছে এলাকাবাসীর দৈনন্দিন কাজ-কর্ম।
নারায়ণগঞ্জের মধ্যে আড়াইহাজারের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শিল্পভিত্তিক এলাকা না হলেও এখানে অনেক সাইজিং ও টেক্সটাইল মিল রয়েছে। থেমে থেমে কখনো হালকা আবার কখনো ভারী বৃষ্টি হচ্ছে এবং ঘন ঘন হচ্ছে বিদু্যৎবিভ্রাট। ফলে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। অনেক শ্রমিক কাজে যোগদান করতে পারেনি।
অপরদিকে পৌরবাজারের অধিকাংশ দোকানপাট রয়েছে বন্ধ। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই সরকারি অফিসগুলো বন্ধ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের জরুরি বিভাগ খোলা। তবে হাসপাতালেও রোগী বা তাদের লোকজনের উপস্থিতি কম লক্ষ করা গেছে।