সুনামগঞ্জের কুশিয়ারা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ভাঙনের ঝুঁকিতে জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের শতাধিক বসতবাড়ি। ইতোমধ্যে রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রানীনগর গ্রামের শচিন্ড মাইষ্য দাস, অবিনাশ বিশ্বাস ও বোরহান উদ্দিনের বসতঘর নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলন বিরুদ্ধে গত ১১ সেপ্টেম্বর রানীনগর গ্রামের বাসিন্দারা জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রানীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের রানী নগর ও পাইলগাঁও গ্রামের কুশিয়ারা নদীর চরে ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে এই গ্রামের ১৫টি পারিবারের বসত ঘর-বাড়ি ঝুঁকির মধ্যে এবং শতাধিক পরিবারের বসত ঘর-বাড়ি বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগে উলেস্নখ করা হয়, বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত একটি প্রভাবশালী চক্র রয়েছে, স্থানীয় ভুক্তভোগী জনসাধারণ তাদের বসতবাড়ি রক্ষার জন্য বাঁধা আপত্তি জানিয়ে আসছেন, কিন্তু বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধা না মেনে বালু উত্তোলন করছেন।
কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী রানীনগর গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী শচিন্ড দাস বলেন, 'আমি গরিব মানুষ, বাড়ি বানানোর সামর্থ নাই, বালু উত্তোলন এর কারণে আমার ঘরটি নদী ভেঙ্গে নিয়ে গেছে।' একই গ্রামের নজির মিয়া বলেন, 'আমরা বালু উত্তোলনে বাধা দিয়ে আসছি, তাঁরা আমাদের বাধা মানে না, আমাদের বাড়ির পাশে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলছে। সমর বিশ্বাস বলেন, আমার বাড়িটি ভাঙনের শিকার, বাড়ির থেকে মাত্র দুইশ ফুট দূর থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যে আমার বাড়িটি ভেঙে যাবে।'
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ও ইউনিয়নের দুটি স্থানে কুশিয়ারা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে আওয়ামী লীগের একটি চক্র প্রায় দুই বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। সরকারি অনুমোদনের নামে বালু উত্তোলন করে বাণিজ্য করায় গত ২৯ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে স্থানীয় দৈনিক সুনামকণ্ঠ পত্রিকায় অবাধে বালু উত্তোলন ঝুঁকিতে রানীগঞ্জ সেতু শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রাকাশিত হয়। উক্ত প্রকাশিত সংবাদটি আদালতের দৃষ্টি গোচর হলে আদালত এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত চক্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থ নেওয়ার জন্য আদেশ প্রদান করেন এবং গত ২৫ জুনের মধ্যে জেলা নৌ পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। বালু উত্তোলন বেআইনি হলেও প্রভাব খাটিয়ে চক্রটি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বলেও এলাকাবাসী জানান।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জগন্নাথপুর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, 'বালু উত্তোলনের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দেখার জন্য লোক পাঠিয়েছি।'