মরু অঞ্চলের সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতের ফল সাম্মাম। বর্তমানে বাগেরহাটের ফকিরহাটে পরীক্ষামূলকভাবে এই ফলের চাষ শুরু করেছে কৃষকরা। এরই মধ্যে সাম্মাম এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাম্মাম চাষে কেউ আগ্রহী হলে কৃষি অধিদপ্তর থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ। উপজেলার নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নের ডহরমৌভোগ এলাকায় মৎস্য ঘেরের উপর বিশেষ পদ্ধতিতে মাচা করে সেখানে সাম্মাম ফলের চাষ করছেন কৃষকরা। গাছে গাছে ঝুলছে সাম্মাম। সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে ফলগুলো। প্রায় প্রতিটি গাছে দুই থেকে তিনটি করে ফল ধরেছে।
ডহরমৌভোগের কৃষক কালিদাস ঢালী জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে পরীক্ষামূলকভাবে এই ফলের চাষ শুরু করেন। তিনি চার বিঘা মৎস্য ঘেরের আইলে বীজ বোপণ করেন। এরপর গাছ বাড়তে থাকলে ঘেরে উপর বাঁশ ও জাল দিয়ে মাচা তৈরি করে প্রথম পর্যায়ে সাম্মাম চাষ শুরু করেন। এই চাষ করতে তার ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অনেকে ঘেরে এসে এই ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কোনো সমস্য না হলে দেড় লক্ষাধিক টাকার সাম্মাম ফল বিক্রি করতে পারবেন জানান তিনি।
কৃষক রুপক তালুকদার, সম্রাট মজুমদার, লিপন ঢালীসহ অনেক কৃষক জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় তারা ঘেরের উপর মাচা করে সাম্মামের চাষ করেছেন। বীজ বোপনের দুই মাসের মধ্যে গাছে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। ঘেরের আইলে অন্যান্য সবজি পাশাপাশি এবার সাম্মাম চাষ করেছেন তারা। বাজারে এর চাহিরা আছে। ভালো দামও পাওয়া যাবে। এই ফলের চাষ করে কৃষকরা লাভবান হবেন। আগামীতে বাণিজ্যকভাবে এই ফলের চাষ করবেন বলে জানান তারা।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপস্নব কুমার দাস জানান, এই ফল মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি অঞ্চলের হলেও ফকিরহাট উপজেলার ডহরমৌভোগ সহ কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে সাম্মাম চাষ করছেন। সাম্মাম ফলের চারা রোপণের দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে ফল পাকা শুরু হয়। সাম্মাম মূলত বেলে-দোয়াশ মাটিতে চাষ ভাল হয়। ফকিরহাটের অনেক অঞ্চলের মাটি সাম্মাম চাষের জন্য উপযোগী। তিনি আরো জানান, গাছের গোড়ার অংশের মাটি এক ধরনের পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এসব কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যে সব ফলের চাহিদা বেশি সেই সব ফল চাষের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদেরকে নানাভাবে উৎসাহিত করেন। প্রযুক্তিগত সহায়তার পাশাপাশি তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ফকিরহাটে পরীক্ষামূলকভাবে মৌচাক জাতের সাম্মাম ফলের চাষ শুরু করেছে কৃষকরা। রকমেলন বা সাম্মাম একটি উচ্চমূল্যের বিদেশি ফল। গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে কিছু অঞ্চলে চাষাবাদ হচ্ছে।
তিনি আরও জানান সাম্মামের চারা রোপণ করার পর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে গাছে ফুল ও ফল আসে। আর সব মিলিয়ে আড়াই মাসের মধ্যে ফল তোলা যায়। এই ফলের চাষ করে লোকসানের কোনো শঙ্কা নেই। সাম্মাম চাষে কেউ আগ্রহী হলে কৃষি অধিদপ্তর থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।