মৌলভীবাজারে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ৫শ' কোটি টাকার ক্ষতি
প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মৌলভীবাজার জেলায় পরপর চার বারের বন্যায় প্রায় ৫শ' কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সড়ক বিভাগ, নদী ও হাওড় পাড়ের মানুষ ও কৃষি জমির। শুধু সড়ক বিভাগের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩শ' কোটি টাকার।
জানা গেছে, লাগাতার বন্যায় মৌলভীবাজারের চারটি নদী কুশিয়ারা, মনূ, ধলাই ও জুড়ী নদে ব্যাপক হারে পানি বৃদ্ধি পায়। এতে তলিয়ে যায় দেশের বৃহত্তম হাওড় হাকালুকি, হাইল হাওড়, কাউয়াদিঘীসহ বেশ ক'টি হাওড়। বিশেষ করে কুশিয়ারা নদীতে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার নদী পাড়ের প্রায় ৫০টি গ্রাম পস্নাবিত হয়। কুশিয়ারা নদীতে বাড়িঘর তলিয়ে গিয়ে ঘরবাড়ি ধ্বংশ হয়েছে প্রায় ১শ' টি। এতে ক্ষতি হয়েছে এক কোটি টাকার উপরে।
কুশিয়ারা নদী পাড়ের রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের তাহিদ আলী বলেন, 'বানের ঢলে যখন আমরা আক্রান্ত, ঠিক ওই কঠিন সময়ে ক্যানসার আক্রান্ত ভাই মারা গেছেন। তাকে কিভাবে দাফন-কাফন করাব সেই অর্থকরীও ছিল না। আবার সব জায়গায় পানি থই থই করায় কবর দেওয়ারও কোনো জায়গা পাচ্ছিল না। পরে একটা ব্যবস্থা হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ওই বিপদের মধ্যেও নদীপাড়ের একমাত্র সম্বল ঘরটিও ধসে পড়েছে। কেউ যদি সাহায্যের হাত বাড়াতেন তবে ঘরটি মেরামত করতে পারতাম।'
এদিকে সদর ও রাজনগর উপজেলায় অবস্থিত কাউয়াদিঘী হাওড়ে মনূ নদের পাড় ভেঙে পানি ঢুকে সব রোপা আমন তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যায় রাজনগর উপজেলা সদর। এতে রাজনগর বাজারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ওই বানে হাওড়ের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার। এছাড়াও মৌলভীবাজার সওজ ও এলজিইডির সড়ক তলিয়ে গিয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার সড়ক ধসে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৪শ' কোটি টাকার। এছাড়াও নদীপাড় ও হাওড়পাড়ের প্রায় ২০০ ফিসারি বানের জলে তলিয়ে গিয়ে আরো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার।
এদিকে মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ শুক্রবার এ প্রতিবেদককে বলেন, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় এ মৌসুমে ৩৯ হাজার হেক্টর রূপা আমন জমি তলিয়ে গেছে।
মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ বলেন, 'দীর্ঘ বন্যায় আমাদের ৭৫ কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে গেছে। ওই সড়কের মধ্যে কিছু ভেঙে গেছে আবার কিছুটা ভেঙে যায়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'মাটি ভরাটসহ দীর্ঘমেয়াদি সড়কগুলো মেরামত করলে ব্যয় হবে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। আর স্বাভাবিক নিয়মে সড়ক সংস্কার করা হলে খরচ হবে ১২৬ কোটি টাকা। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।'