মেট্রোরেলে হাফ পাস কার্যকরের দাবি শিক্ষার্থীদের

রাজধানীতে দ্রম্নত গতির যান হিসেবে পরিচিত মেট্রোরেলে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস কার্যকরসহ ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সড়ক পরিবহণ ও সেতু উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ ও সমাবেশ শীর্ষক ব্যানারে এ দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আমরা দেখেছি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাট ও অর্থ পাচার। আমলাতন্ত্র ও বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় সরকার দেশের পরিবহণ খাতকেও লুটপাট ও দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। এর অন্যতম নজির ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প। এ প্রকল্পের অধীনে ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকায় মোট ৬টি রুটে মেট্রো লাইন নির্মাণের কথা হয়েছিল। এর মধ্যে ১টি, ডিএমআরটি-৬, যা উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত, সেটা চালু করা হয়েছে। শুরুতে (২০২২ সালে) লাইন-৬ এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২ হাজার কোটি টাকা (প্রায়)। পরবর্তীতে কাজে দীর্ঘসূত্রিতা করে এ প্রকল্পের ব্যয় আরও ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকায় কাজ শেষ করে এ লাইন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোরেলের কিলোমিটার প্রতি নির্মাণ ব্যয় সাম্প্রতিককালে নির্মিত জাকার্তা ও লাহোর মেট্রোরেলে ব্যয়ের দ্বিগুণেরও বেশি। শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশে যেকোনো প্রকল্প দীর্ঘসূত্রিতা করে বাজেট বৃদ্ধি করার নামে ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থপাচার করার যে প্রাত্যহিক চিত্র- এ কারণেই শাসকশ্রেণি পরবর্তীতে জনগণের ওপর বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়। ঢাকায় লাইন-৬-এর ২০ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ টাকা ও ১০০ টাকা। এ ভাড়া রাজধানীর বেসরকারি বাস ভাড়ার দ্বিগুণ এবং ভারত ও পাকিস্তানের মেট্রোরেলের ভাড়ার চেয়ে ২ থেকে ৫ গুণ বেশি- যা দেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ এগিয়ে থাকা জনগণের অংশ ছাত্রছাত্রী এবং গরিব নিম্নবিত্ত মানুষের সাধ্যের বাইরে। আজকের নতুন বৈষম্যহীন দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে মেট্রোরেলের এ বাড়তি ভাড়া আদায় এবং শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস না রাখা নতুন ধরনের বৈষম্য তৈরি করছে। তারা বলেন, মেট্রোরেলে লাইন-৬ চালু হওয়ার পর ২০২৪-এর শুরু থেকেই ভাড়া কমানো এবং শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস কার্যকর করার দাবিতে ঢাকায় দফায় দফায় বিভিন্ন স্থানে ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছে, মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। কিন্তু ছাত্রদের এই দাবি ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি কোনো বিবেচনা না করেই উল্টো সরকার মেট্রোরেলের সেবা ও টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে আগের ভাড়া আরও বাড়ানোর কথা ভেবেছিল। শিক্ষার্থীরা বলেন, অথচ আমরা জানি, বিভিন্ন দেশের রেলসহ বিভিন্ন গণপরিবহণ সরকার ভর্তুকি দিয়ে চালায়। আমরা যদি মেট্রোরেল আইন ২০১৫-এর উদ্দেশ্য দেখি- সেখানে বলা হয়েছে, 'জনসাধারণকে স্বল্প ব্যয়ে দ্রম্নত ও উন্নত গণপরিবহণ সেবা প্রদান' এবং এ আইনের ১৮/২ ধারায় মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে মেট্রোরেল পরিচালনার ব্যয় এবং জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়গুলো বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার নিজের তৈরি আইন ও বিধিমালাই অনুসরণ করেনি। যানজটের শহর ঢাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত মেট্রোরেলের দ্রম্নতগতির, নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবহণ সেবা পাওয়ার অধিকার ঢাকার সর্বস্তরের জনগণের এমনটি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, মেট্রোরেল যেন শুধুমাত্র সামর্থ্যবান শ্রেণির মানুষের বাহনে পরিণত না হয় এবং সর্বস্তরের মানুষের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে যানজট নিরসনে উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে সেজন্য বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে এবং প্রতিবেশী দেশের নগরীগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেট্রোরেলের ভাড়া হ্রাস করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। একই সঙ্গে গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দায়িত্বে আসা অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে আমরা মেট্রোরেলে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস কার্যকর করার দাবি জানাই।