নবীনগরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ
প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে জলাবদ্ধ জায়গায় ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ। উপজেলার ইব্রাহিম ইউনিয়নের বাঁশবাজার, সলিমগঞ্জ, নবীনগর পূর্ব ও সাতমোড়া এলাকার ৫ স্থানে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো এই ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীনগর উপজেলায় ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি বর্ষাকালে জলাবদ্ধ থাকে। জমিগুলো জলাবদ্ধতায় থাকে বছরে প্রায় ৫-৬ মাস। জলাবদ্ধ জমিগুলোতে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়। (ঋজঊঅচ) প্রকল্পের আওতায় উপজেলার চারটি গ্রামের পাঁচটি স্থানে এই ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। স্বাভাবিক চাষাবাদ থেকে, ভাসমান চাষাবাদে অনেক বেশি সবজি হয়। এই চাষাবাদে কোনো রোগ বালাই থাকে না। বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করে এই চাষ হয়।
ভাসমান পদ্ধতিতে লতা জাতীয় সবজির (চাল কুমড়া, লাউ, শসা, করলা যেগুলো মাচায় রাখা যায়) ফলন অনেক ভালো হয়। ভাসমান সবজি চাষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন তদারকি করে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের কৃষক ইসমাইল মিয়া জানান, টিভিতে এ ধরনের ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ দেখেছেন। এতে উৎসাহী হয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেন। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এবার বাস্তবায়ন করেন এই পদ্ধতির চাষাবাদ। ইতোমধ্যে ২০ হাজার টাকার কলমি শাক, শসা, লাউ বিক্রি করেছেন। ফসলের উৎপাদন অনেক ভালো, রোগবালাই খুবই কম। অনেকে তার এই সবজি চাষ দেখতে আসেন। আশা করছেন, অনেকেই আগামীতে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করবে। উপজেলার বগডহর গ্রামের কৃষক টিপু মুন্সি বলেন, বর্ষাকালে এই অঞ্চলে সবজি আবাদ হবে- এটি তাদের কাছে স্বপ্নের মতই ছিল। তবে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে উপজেলা কৃষি অফিস। তিনি নিজেও ২০ শতক জমিতে লাউ, চাল কুমড়া চাষাবাদ করেছেন।
নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার গিয়াস উদ্দিন নাঈম জানান, এই জমিগুলো বছরে ৫-৬ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। ভাসমান পদ্ধতিতে কমিউনিটি ভিত্তিতে সবজি আবাদ করে ইতোমধ্যে লাউ, শসা, কলমি শাক, পালং শাক উৎপাদন করা হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, নবীনগরে প্রথমবার ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ হয়েছে। ভাসমান পদ্ধতিতে আবাদ কৌশল শেখাতে (ঋষড়ড়ফ জবপড়হংঃৎঁপঃরড়হ ঊসবৎমবহপু অংংরংঃধহপব চৎড়লবপঃ) প্রকল্পের আওতায় ২ শতাধিক কৃষককে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৫টি প্রদর্শনীতে ভাসমান কাঠামো তৈরি, বীজ ও সার দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করছে। এটি নিরাপদ কৃষি উৎপাদন প্রযুক্তি হিসেবে ইতোমধ্যে সমাদৃতও হয়েছে। আগামীতে এই প্রযুক্তির সবজি চাষ এখানকার জন্য দারুণ সম্ভাবনাময়।
তিনি আরও বলেন, এই পদ্ধতিতে কৃষকদের বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরির খরচটাই একটু বেশি। এ ছাড়া তেমন আর কোনো খরচ নেই। এই চাষাবাদে উৎপাদন অনেক বেশি। লতা জাতীয় সবজিগুলো বেশি উৎপাদন করা যায়। জলাবদ্ধ জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে ঢালি কিংবা বেড তৈরি করে চাষাবাদ কৌশলকে ছড়িয়ে দিতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে কাজ করছে। আগামী দিনে নিরাপদ ও অসময় সবজি উৎপাদন করে খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে।