কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ওপর দিয়ে বয়ে চলা মেঘনা নদী ও খুলনার পাইকগাছার ওপর দিয়ে বয়ে চলা কপোতাক্ষ নদের ভাঙন দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর ফলে ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীর তীরবর্তী মানুষ। ইতোমধ্যে ভাঙনে ১৩০ মিটার জায়গা মেঘনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে সার গুদাম, তেলের ডিপো ও রেলওয়ে সেতু। স্থানীয়রা শিগগিরই ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে ১৩০ মিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে বিএডিসি'র দুই সার গুদাম ও অফিস, যমুনা অয়েল কোম্পানির তেলের ডিপো ও অফিস এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের সেতু।
গত রোববার ভোর রাত ৩টার দিকে নদী পাড়ের রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন সার গুদাম ও যমুনা তেলের ডিপো এলাকায় ভাঙনের ঘটনাটি ঘটে। এ সময় বিএডিসির সার গুদামের সামনে থাকা দরিদ্রদের বসতবাড়ি ও যমুনা অয়েল কোম্পানির একটি অফিসের অর্ধেক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। খবর পেয়ে ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) রেদোয়ান আহমেদ রাফি, কিশোরগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আতিকুল গনি, বিএডিসি (সার) কিশোরগঞ্জের যুগ্ম-পরিচালক ইকবাল মোহাম্মদ মোত্তাকিন, যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক এলাহী, ভৈরবর্ যাব ক্যাম্পের কমান্ডার মো. শহীদুলস্নাহ, ভৈরব পুলিশ সার্কেলের এএসপি দেলুয়ার হোসেন খাঁন, থানার ওসি সফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নদীপাড়ের বাসিন্দা হোসনা বেগম বলেন, রাত ৩টার দিকে লোকজনের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, তার ঘরের অর্ধেক নদীগর্ভে চলে গেছে। এ সময় কোনোরকম জীবন নিয়ে পরিবারসহ ঘর থেকে বের হন। পাউবো'র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আতিকুল গনি জানান, প্রাথমিকভাবে নদী এলাকা পরিদর্শন ও পরীক্ষা করে জেনেছেন, ১৩০ মিটার এলাকা বিলীন হয়েছে। ভাঙন এলাকায় নদীর গভীরতা ৫-৭ মিটার। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলেন।
ভৈরব বিএডিসি'র সহকারী পরিচালক (সার) শিপন সাহা বলেন, 'আমাদের দুটি সার গুদামে ৯ হাজার ৭৩ মে. টন নন-ইউরিয়া সার মজুত আছে, যার সরকারি মূল্য প্রায় ১৮ কোটি টাকা। ভাঙন এলাকাটি গুদামের ৩০০ গজের মধ্য এসে গেছে। গুদামটি ভাঙনের কবলে পড়লে সরকারের ১৮ কোটি টাকা ক্ষতি হবে।' যমুনা অয়েল কোম্পানির ভৈরব অফিসের সহকারী ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান জানান, 'আমাদের ডিপোতে ১৮ লাখ লিটার জ্বালানি তেল মজুত আছে, যার মূল্য ১৮ কোটি টাকা। নদী ভাঙনে আমাদের একটি অফিস অর্ধেক ভেঙে গেলেও ডিপোর ক্ষতি হয়নি। তবে ভাঙন বৃদ্ধি পেলে মারাত্মক ক্ষতি হবে।' ভৈরব রেলওয়ের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান জানান, মেঘনার ওপর ২৯ নম্বর রেলওয়ে সেতু থেকে ভাঙন এলাকা সম্ভবত এক হাজার গজ দূরে হবে। ইউএনও রেদোয়ান আহমদ রাফি বলেন, ভাঙন এলাকাটি অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অনেকগুলো সরকারি স্থাপনা রয়েছে। ভাঙন রোধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, খুলনার পাইকগাছার কপোতাক্ষের বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রম্নত ব্যবস্থা না নিলে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা পস্নাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন কপোতাক্ষ পাড়ের হাচিমপুর আশ্রয়ণকেন্দ্রের বাসিন্দারা।
গত সোমবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খননকৃত মরিচ্চাপ নদীর আটকানো বাঁধ ভেঙে গেলে ওই নদীর পানি সরাসরি আঘাত করে পাইকগাছার চাঁদখালী ইউনিয়নের হাচিমপুর আশ্রয়ণকেন্দ্র সংলগ্ন খননকৃত কপোতাক্ষ নদের বাঁধে। টানা ৩ দিনের পানির আঘাতে বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। ইতোমধ্যে বাঁধের ২০০ ফুট এলাকাজুড়ে অনেকটাই নদীতে ধসে গেছে। একাধিক স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও ভাঙন রোধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হাচিমপুর আশ্রয়ণকেন্দ্রের বাসিন্দা বেবী বেগম বলেন, 'বাঁধ ভেঙে গেলে প্রথমে আমরা আবাসনের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হব। আমরা ৬০ পরিবার বর্তমানে চরম ঝুঁকিতে রয়েছি।' মনিরুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে দ্রম্নত ব্যবস্থা না নিলে হাচিমপুর, দেবদুয়ার, শাহপাড়াসহ চাদখালী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা পস্নাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাউবো'র উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার বলেন, যেখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে, এটি মূল বেড়িবাঁধ নয়। এরপরও এলাকার ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশ পেলে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও মাহেরা নাজনীন বলেন, ভাঙনের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সাতক্ষীরা জেলা ও আশাশুনি উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রম্নত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।