৫০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ

সোনালি আঁশ ও রুপালি কাঠিতে স্বপ্ন বুনছেন টাঙ্গাইলের কৃষক

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে পাট জাগ দেওয়ার কাজে ব্যস্ত কৃষক -যাযাদি
টাঙ্গাইলে চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। সোনালি আঁশ ও রুপালি কাঠি ভালো দামে বিক্রি হওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন বুনছে কৃষকরা। পাট ও পাটপণ্যের বাজার ধরে রাখতে পলিথিনের বস্তা শতভাগ পরিহারের পাশাপাশি দেশের সব পাটকল চালু ও বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়ার দাবি করেছেন তারা। টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় জেলায় প্রতি বছর সোনালি আঁশের চাষ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৩০ হাজার ৬৯০ বেল পাট উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। চলতি বছর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ধরা হয়েছিল। জেলার কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৫২ হাজার ৫৫৮ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছর জেলায় ৬ হাজার ২০০ জন কৃষককে এক কেজি করে পাটের বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। এবার পাট ও পাটখড়ি বা সোনালি আঁশ ও রুপালি কাঠির বাজার দরও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি মণ পাট সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাট বা সোনালি আঁশ বিক্রি করে একদিকে কৃষক টাকা পাচ্ছেন, অন্যদিকে পাটের কাঠি বা রুপালি কাঠি জ্বালানি ও ঘরের বেড়া দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে। রুপালি কাঠির বাজার দরও আশানুরূপ। সরেজমিন জানা যায়, জেলার ১২টি উপজেলায়ই পাটের আবাদ হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা পাট জাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত। বেশিরভাগ জমির পাটই কাটা হয়েছে। এর অধিকাংশই জাগ দেওয়াও হয়ে গেছে। অনেকে পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন। কেউবা পাটকাঠি বা শোলার আঁটি বেঁধে রোদে শুকাচ্ছেন। কেউ আবার পাট ভাঁজ করে রোদে মেলে দিচ্ছেন। জেলার পাট চাষিরা জানান, টাঙ্গাইল জেলায় দেশি, তোষা, কেনাফ, রবি-১ ও ভারতীয় বঙ্গবীর জাতের পাট সব চেয়ে বেশি আবাদ হয়। কৃষি অফিস থেকে প্রতি বছর পাটের বীজ ও সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়। তবে কৃষি বিভাগের দেওয়া বীজগুলো সময় মতো চাষিদের কাছে পৌঁছায় না। ফলে পাটের আবাদ ব্যাহত হয়। সময় মতো পাট বীজ হাতে পেলে জেলায় পাটের আবাদ আরও বেশি হবে। পাটচাষিরা আরও জানান, চলতি মৌসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টিপাতের অভাবে পাটের আবাদে কিছুটা সমস্যা হয়। তবে শেষ দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় পাটের আবাদ বেড়েছে। এছাড়া নিবিড় পরিচর্যা এবং পাট ও কৃষি অফিসের পরামর্শের কারণে আবাদে তেমন কোনো রোগবালাই দেখা দেয়নি। বাজারে এবার দাম ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পয়লা গ্রামের পাট চাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি এবার ২৫ শতাংশ জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। ৫০০ টাকা মজুরির ১৫জন শ্রমিক লেগেছে। এতে তিনি প্রায় ৬ মণ পাট পাবেন। পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। বাজারে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকায়। এছাড়া একশ' আঁটির পাটকাঠি বা রুপালি কাঠি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের আগ দেউলী গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, এ বছর তিনি চার বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় সাত মণের মতো ফলন হয়েছে। চার বিঘা জমির পাট তিন হাজার ৪০০ টাকা মণ হারে বিক্রি করে ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। চার বিঘা জমির পাট আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এতে তার প্রায় ৫৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। উপজেলার ছিলিমপুর হাটের পাট ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম জানান, তারা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনে দেশের বিভিন্ন মিল পার্টির কাছে বিক্রি করেন। প্রতি শুক্রবার ছিলিমপুর হাটে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনা হয়। হাটের দিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ মণ পাট কেনাবেচা হয়। এ বছর তিন হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে পাট কিনছেন। মণে ৮০ থেকে ১০০ টাকা লাভে বিভিন্ন মিল পার্টির কাছে তারা বিক্রি করে থাকেন। জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান খান জানান, পাট অধিদপ্তর থেকে চলতি বছর জেলার ১২টি উপজেলার ৩৬ হাজার কৃষককে এক কেজি পাট বীজ ও ১২ কেজি করে সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও তালিকাভুক্ত ৯০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল উদ্দিন জানান, পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পাট চাষে ঝুঁকছেন। তাই তারা এখন লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। দেশে আবার সোনালি আঁশের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে।