যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একমাত্র সচল ৩য় ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় ব্যাপক বিদু্যৎ ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। কিন্তু বিদু্যৎ কেন্দ্রটি যে শিগগিরই উৎপাদনে যেতে পারবে, সেই সম্ভাবনার কোনো আভাস মেলেনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিকে দুষছে কর্তৃপক্ষ।
বিদু্যৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রটির ৩টি ইউনিটের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট ২০২০ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। সচল ছিল তৃতীয় ইউনিটটি। এই ইউনিট থেকে প্রতিদিন ২০০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন হয়ে আসছিল। তবে এ ইউনিটটি ২৭৫ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন। আর ২ নম্বর ইউনিট ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার হলেও উৎপাদন হতো ৬৫-৭০ মেগাওয়াট। ৬ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার পর ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১ নম্বর ইউনিটটি সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ হয়। এ ইউনিটে উৎপাদন হতো ৬০-৬৫ মেগাওয়াট। ফলে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় বিদু্যৎ সরবরাহে বিঘ্নিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদু্যৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল।
তাপবিদু্যৎ কর্তৃপক্ষ জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছরের চুক্তি মোতাবেক আগামী বছর তাদের মেয়াদ শেষ হবে। চুক্তি মোতাবেক এ সময় উৎপাদন সচল রাখতে মেরামত ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কথা থাকলেও কিছুই করেনি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার কারণেই বিদু্যৎ কেন্দ্রটি বার বার ত্রম্নটি দেখা দিলেও সঠিকভাবে মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে বিদু্যৎ উৎপাদন কাজ ব্যাহত হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে প্রতিটি ইউনিট সচল রাখতে দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প প্রয়োজন হয়। সেই পাম্প দিয়ে ওই ইউনিটের জ্বালানি হিসেবে তেল সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখা হয়। কিন্তু ২০২২ সাল থেকেই তৃতীয় ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি পাম্প নষ্ট থাকায় যে কোনো সময় বন্ধের ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প হিসেবে একটি ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প দিয়ে চলে আসছিল এর উৎপাদন কার্যক্রম। ফলে মাঝেমধ্যেই যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে বন্ধ হতো উৎপাদন। একাধিকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি অবগত করলে তারা অজ্ঞাত কারণে আমলে নেননি।
সর্বশেষ ৬ সেপ্টেম্বর মেরামতের মাধ্যমে ইউনিটটি চালু করা হলে দুই দিনের মাথায় আবারও সোমবার সন্ধ্যায় যান্ত্রিক ত্রম্নটি দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যক্রম।
সূত্রমতে, তৃতীয় ইউনিট থেকে বর্তমানে উৎপাদিত ১৯০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছিল। এটি সচল রাখতে প্রতিদিন দুই হাজার ২০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডে কয়লা মজুত রয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। খনি থেকে দৈনিক কয়লা সরবরাহ করা হয় প্রায় ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন। তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট চালু রেখে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য দৈনিক প্রায় ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন। তবে, তিনটি ইউনিট একই সঙ্গে কখনই চালানো হয়নি। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সরবরাহকৃত কয়লার ওপর নির্ভর করে বড়পুকুরিয়া তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রটি।
বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক মুঠোফোনে জানান, প্রতিটি ইউনিটের জন্য দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প থাকে। যা ওই ইউনিটের জ্বালানি হিসেবে তেল সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখে; কিন্তু ২০২২ সাল থেকেই তৃতীয় ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি পাম্প নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে একটি পাম্প দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল। কিন্তু ওই পাম্পটিও সোমবার বিকল হয়ে যাওয়ার পর দিনব্যাপী চেষ্টা করেও চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে উৎপাদন।
তিনি আরও জানান, 'ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে তারা দু'সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। চীন থেকে মেশিন এলেই উৎপাদন শুরু করা যাবে।'