শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
কোটি টাকা বিক্রির আশাবাদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কালিহাতিতে জমজমাট ধানের চারা বিক্রির হাট

স্বদেশ ডেস্ক
  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও টাঙ্গাইলের কালিহাতির এলেঙ্গায় ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখর ধানের চারা বিক্রির হাট -যাযাদি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে চলতি আমন মৌসুমে জমে উঠেছে ধানের চারা বিক্রির হাট। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকসহ আশপাশ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা আসেন চারা কিনতে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের পদচারনায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুখরিত থাকে এই দুই হাট। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলতি আমন মৌসুমে জমে উঠেছে ধানের চারা বিক্রির হাট। কুমিলস্না-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের নন্দনপুর বাজারের পাশে এই ধানের চারার হাটটি বসেছে।

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকসহ আশপাশ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা আসেন এই বাজারে ধানের চারা কিনতে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের পদচারণায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুখরিত থাকে হাটটি।

কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে- প্রতিদিন এই বাজারে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার চারা বিক্রি হয়। এ বছর হাটে প্রায় ২ কোটি টাকার চারা বিক্রি হবে।

সরেজমিন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নন্দনপুর এলাকার মৌসুমি ধানের চারার হাটটি বেশ পুরাতন। মূলত আমন মৌসুমে এই চারার হাটটি ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় জম-জমাট হয়ে উঠে। প্রতিদিন ভোরে বিক্রেতারা চারা নিয়ে আসেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে দূর-দুরান্ত থেকে আসতে থাকেন ক্রেতারা। বিভিন্ন রকমের ধানের চারা আঁটি হিসেবে বিক্রি করা হয়। ছোট চারার প্রতি আটি ৮০ টাকা থেকে ১২০ এবং বড় চারার আটি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

এই হাটে বিভিন্ন জাতের ধানের চারা বিক্রি হয়ে থাকে। এর মধ্যে বিআর-২২, খাসা, নাজির ও বিনা ধান-৭ অন্যতম। জেলাসহ আশপাশ এলাকার পাইকাররা এই বাজার থেকে চারা কেনেন।

বাজারে চারা কিনতে আসা জেলার সদর উপজেলার মজলিশপুর গ্রামের রমজান মিয়া নামের একজন কৃষক জানান, প্রতি বছরই তিনি এই হাট থেকে ধানের চারা কেনেন। আজও (মঙ্গলবার) বিআর-২২ জাতের ২০ মোটা চারা ১৫০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম একটু বেশি। তবে এই বাজারের চারার মান অনেক ভালো। তাই ধানের উৎপাদনও ভালো হয়।

জেলার কসবা উপজেলার ক্রেতা শাহআলম বলেন, আমন মৌসুমে এই হাট থেকে তিনি প্রতি বছর ধানের চারা কেনেন। আশপাশ এলাকার বিক্রেতারা এই বাজারে চারা বিক্রি করেন। আজ (মঙ্গলবার) দেড় কানি জমির জন্য ২৮২০ টাকা দিয়ে ২৮ আটি বিআর-২২ জাতের চারা কিনেছেন।

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা থেকে চারা কিনতে আসা কৃষক সুজন চৌধুরী বলেন, তিনি দুই কানি জমির জন্য চারা কিনবেন। দাম মোটামুটি নাগালের মধ্যে। হাটে কোনো দালাল নেই। হাটটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় খুব সহজেই যাতায়াত করা যায়।

হাটে চারা বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার চান্দিয়ারা গ্রামের খোরশেদ ইসলাম বলেন, 'এবার ২ কানি জমিতে ধানের চারা করেছি। ছোট চারা প্রকার ভেদে আঁটি ৮০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। বেচা-বিক্রি ভালোই হচ্ছে, আগামী দিনগুলোতে এমন বিক্রি হলে ভালো লাভবান হবো।'

আরেক বিক্রেতা সদর উপজেলার সুহিলপুরের কাঞ্চন দাস বলেন, দেড় কানি জমিতে চারার বীজতলা করেছি। এতে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমিতেই এই চারা পাইকারের কাছে ৪৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুন্সী তোফায়েল হোসেন বলেন, নন্দনপুরের এই চারার হাটটি বেশ পুরাতন। প্রতিদিন এই হাট বসে। এখানে মানসম্মত চারা পাওয়া যায়। এই হাট থেকে জেলার কৃষকদের পাশাপাশি হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও নরসিংদী জেলার কৃষকরা এসে চাহিদা অনুযায়ী চারা কিনে নিয়ে যান।

কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় জমে উঠেছে ঐহিত্যবাহী ধানের চারার হাট। পৌরসভার শামসুল হক কলেজ মোড়ের এ হাটটি প্রায় ৬০ বছরের পুরনো। ভোর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ লাখ টাকার ধানের চারা বেচাকেনা করে থাকেন এ হাটে। তবে সার ও ডিজেলের দাম বেশি থাকায় প্রান্তিক কৃষক এবং ডিজেলচালিত সেচ পাম্প মালিকরা চিন্তিত।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাটে বিভিন্ন জাতের ধানের চারায় সয়লাব হয়েছে। চাষিরা দর কষাকষি করে চারা কিনছেন। চাহিদা বাড়ায় আঁটি প্রতি দাম বেড়েছে ২-৫ টাকা। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, নওগা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, মুক্তাগাছা, কালিহাতী, ঘাটাইল ও সখীপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা কিনে আনেন ব্যবসায়ীরা।

সেগুলো জেলার চাষিদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করছেন। পার্শ্ববর্তী মানিকগঞ্জসহ অন্য জেলায়ও বিক্রি করা হয় এসব চারা। এখানে ব্রি ৩৪, ৪৯, ৫২, ৭১, ৭২, ৭৪, ৭৫, ৮৭; বিআর ১১, ২২,২৩; বিনাধান ৭, ১৭, ২০; স্থানীয় জাত নাজিরশাইল, পাইজাম, বিনাশাইল, স্বর্ণা, কালিজিরা, রনজিত, গাইঞ্জা, পাটজাক প্রভৃতি ধানের চারা পাওয়া যায়। ধানের চারাভেদে প্রতি আঁটি (মুঠি) চারা পাঁচ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এলেঙ্গার মশাজান গ্রামের সজিব হোসেন বলেন, 'আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে ধানের চারার ব্যবসা করি। পাহাড়ি উঁচু এলাকা থেকে চারা কিনে এলেঙ্গা হাটে বিক্রি করে থাকি। ১০০ আঁটি চারা বিক্রি করলে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা লাভ হয়। টাঙ্গাইলের দক্ষিণাঞ্চলসহ নিচু এলাকার চাষিরা এখান থেকে বেশি চারা কেনেন।'

কালিহাতীর বাগুটিয়া গ্রামের খলিল মিয়া জানান, তার নিচু জমিতে চারা তৈরি করলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ হাট থেকে চারা কেনেন। এবার ২০০ আঁটি স্বর্না ধানের চারা কিনেছেন। কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা মামুন জানান, এলেঙ্গা ধানের চারার হাট অনেক পুরাতন এবং জেলার অন্যতম। ঐতিহ্যবাহী এ হাটে বেচা-কেনার বিস্তৃতি বৃদ্ধিতে তা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কবির হোসেন জানান, এ বছর রোপা আমন মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ লাখ ১৯০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৯৫ হাজার ১৮০ হেক্টর। চলতি মাসের পুরোটা সময়ই বিভিন্ন জাতের চারা রোপণ করা যাবে। বিদু্যৎচালিত সেচ পাম্পে সরকারি ভর্তুকি রয়েছে। ইতিমধ্যে ডিজেলের দামও কিছুটা কমানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে