তীব্র গরম ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে বেশির ভাগ কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স মেশিনপত্র বিকল হয়ে যাওয়াসহ কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সারাদেশের মতো বিদু্যৎ বিভ্রাটের কবলে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার মানুষ। ঘন ঘন বিদু্যৎ ট্রিপ করা ও মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে ডেইরি ও পোল্ট্রি খামারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কম্পিউটারে কাজ করা লোকেরা বারবার কম্পিউটার সাড়াতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর কারণ নারায়ণগঞ্জ পলস্নীবিদু্যৎ সমিতি-২ এর আওতাধীন আড়াইহাজার জোনাল অফিসের বিদু্যৎ সরবরাহে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা। ফলে ফুঁসে উঠছেন আড়াইহাজারের বিদু্যৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকরা।
এর আগে একবার বিদু্যতের সমস্যাকালীন আড়াইহাজার জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আসাদুজ্জামান জানিয়েছিলেন, দেশে বিদু্যৎ ঘাটতির কারণে লোডশেডিং না দিয়ে কোনো উপায় নেই। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আড়াইহাজার পৌর সদরে প্রতি ১০ মিনিট পর পর বিদু্যৎ ট্রিপ করছে। ফলে বিভিন্ন দোকান ও অফিসের অনেক কম্পিউটার বিকল হয়ে গেছে। বিদু্যৎ অফিসের সহকারী ডেপুটি ম্যানেজার হাসান তারেক বলেন, 'আপনারা যে রকম বলছেন, সেভাবে এত ঘন ঘন বিদু্যৎ কখনোই ট্রিপ করে না।' তবে তিনি বিদু্যৎ আসা-যাওয়ার কারণে তার নিজের অফিসেরও বেশ কয়েকটি কম্পিউটার বিকল হওয়ার কথা স্বীকার করেন। অন্যদিকে সদরের বাইরের অবস্থা আরও করুণ। প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। ফলে কলকারখানায় যেমন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, তেমন ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্মগুলো হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত।
হাসমত আলী নামে এক ব্যক্তি জানান, এমন অবস্থা চলতে থাকলে একসময় হয়তো উত্তেজিত জনতা বিদু্যৎ অফিস ঘেরাও করতে পারে।
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, প্রচন্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে বগুড়ার জেলার সারিয়াকান্দিতে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। সকাল, দুপুর, বিকাল এমনকি মধ্যরাতেও হচ্ছে লোডশেডিং। ফলে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মানুষ। সারিয়াকান্দি পৌরসভায় গড়ে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। ইউনিয়নগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। অন্য বছরের চেয়ে চলতি বছর গরমের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধরা তীব্র গরমে সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছেন। গরমের সঙ্গে বাড়তি ভোগান্তির আরেক নাম লোডশেডিং। সারিয়াকান্দি পৌর এলাকায় প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। এছাড়া ইউনিয়নগুলোতে লোডশেডিং চরম অবস্থায় পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারিয়াকান্দি পৌর এলাকায় গত শনিবার সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সাতবার লোডশেডিং দেওয়া হয়। রোববার ভোর ৪টায় বিদু্যৎ যায়। আসে সকাল ৯টায়। ইউনিয়ন পর্যায়ে লোডশেডিং আরও বেশি। এখানে সারাদিনে চব্বিশ ঘণ্টার প্রায় বিশ ঘণ্টা বিদু্যৎ থাকে না।
কামালপুর ইউনিয়নের গৃহিণী ফেন্সি বেগম নামে একজন বলেন, এর আগে কোনো দিন এমন কষ্ট হয়নি। রাতে বিদু্যৎ গেলে বাচ্চারা গরমে কান্না করে। এভাবেই প্রতিদিন চলছে।
অটোরিকশা চালক সাগীর বলেন, কিছুদিন আগেও রাতে অটোরিকশা চার্জ দিয়ে সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে সাতশ' থেকে আটশ' টাকা আয় করতেন। এখন বিদু্যৎ ঠিকমতো না থাকায় রিকশায় যে চার্জ হয় তা দুপুর না হতেই শেষ হয়ে যায়। সারাদিনে দুই থেকে তিনশ' টাকা আয় করতে পারেন।
বগুড়া সারিয়াকান্দি পলস্নীবিদু্যৎ সমিতি-২ এর ডিজিএম শফিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, 'সারিয়াকান্দিতে দিনে ৬ মেগাওয়াট বিদু্যৎ প্রয়োজন। কিন্তু পাচ্ছি ৩ মেগাওয়াট। রাতে দরকার ১৩ মেগাওয়াট। পাচ্ছি ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট। তীব্র গরমের কারণে বিদু্যতের চাহিদা বেশি হয়েছে। আশা করি শিগগিরই যথেষ্ট বরাদ্দ পাব, তখন বিদু্যৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।'
আটঘরিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, বিদু্যতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ পাবনা পলস্নীবিদু্যৎ সমিতি-১-এর গ্রাহকরা। গত এক সপ্তাহ ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অন্যদিকে বিদু্যৎনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিগত প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে দিন-রাতে ৮ থেকে ১০ বার লোডশেডিং চলছে। এ সময় গরমের প্রভাব বেশি, এতে দিন-রাত সাধারণ মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাতে ৪-৫ বার বিদু্যৎ গেলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর আসে। দিনেও একই অবস্থা। ফলে বৃদ্ধ, অসুস্থ রোগী ও শিশুদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
পোল্টি খামারি মিরাজ জানান, তার খামারে ১০০০ ডিমের মুরগি। সন্ধ্যা থেকে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত আলো না থাকলে পরের দিন ডিমের উৎপাদন বিশ শতাংশ কমে যায়। ফলে তাকে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ওয়ার্কশপ কারখানার মালিক আনোয়ার জানান, দিনে বারবার লোডশেডিংয়ের ফলে কাজ বন্ধ থাকলেও শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে। তাই প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। আইসিটি খাতের ব্যবসায়ী ইজার আলী জানান, বারবার লোডশেডিংয়ে কোনো কাজ ঠিকমতো করা যাচ্ছে না, উপরন্ত ইন্টারনেট বন্ধ থাকে।