বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিডিসিএল) সহকারী ব্যবস্থাপক পদসহ সরকারী অন্তত ৯টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতারক চক্রের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে বিতর্কিত নিয়োগ পরীক্ষায় কোম্পানিটির নবম ও দশম গ্রেডে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে ২০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নফাঁস, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে তাড়াহুড়ো করে বিজিডিসিএলের এমন নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রেখে উত্তীর্ণদের বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার অভিযোগ করেন চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু বিজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ অভিযোগের বিষয়ে কোনো ধরনের তদন্তই করেনি। এসব বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও কর্ণপাত করছে না বিজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, চলতি বছরের গত ৮ মার্চ বিজিডিসিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক (সাধারণ) পদসহ বিভিন্ন পদে লিখিত পরীক্ষা হয়। এক মাস পর গত ৮ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ওই পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতি হয়েছে বলে জানায় ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ। গত ১২ মে ডিজিটাল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করে সংবাদ সম্মেলন করে ডিবি। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের অভিযোগে জানা যায়, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ দিতেই সুস্পষ্ট অভিযোগ ও তথ্য-প্রমাণ থাকার পরও কোনো ধরনের তদন্ত না করেই এমন অনিয়ম করা হয়েছে। বিজিডিসিএল কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং নিয়োগ কমিটির সদস্যরা এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগে বলা হয়।
পরীক্ষায় ডিভাইস কেলেঙ্কারির কথা জানতে পেরে ১৬ মে বাখরাবাদ বরাবর অভিযোগটির সুষ্ঠু তদন্ত ও নিয়োগ স্থগিতের আবেদন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। আবেদনের প্রেক্ষিতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রেখে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ১২ জুন উকিল নোটিশ পাঠায় তারা। তদন্ত করে জড়িতদের আবেদন বাতিলসহ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়। অভিযোগ আমলে না নিয়ে গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত বোর্ড সভার সিদ্ধান্তে বিতর্কিত পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণদের নিয়োগপত্র প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২৮ জুলাই সহকারী ব্যবস্থাপক পদে যোগ দেন উত্তীর্ণরা এবং তাদের ১৫ আগস্ট সহকারী ব্যবস্থাপক পদে বিভিন্ন শাখায় পদায়ন করা হয়।
ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে আবেদনকারী চাকরিপ্রত্যাশী পরীক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম, এজাজুর রহমান, অর্ণব সূত্রধর, পুষ্পিতা বণিক, রায়হান ফজলে রাব্বী, মাজহারুল ইসলাম, ইকবাল হুসাইনসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগকারী জানান, নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি, জালিয়াতি ও ডিভাইস কেলেঙ্কারির বিষয়টি বিজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ জেনেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই সুষ্ঠু তদন্তের জন্য উকিল নোটিশ পাঠিয়ে তদন্তের জন্য অনুরোধ করা হয়। এরপর তারা আমলে না নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের চাকরি দেয়। যাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং পরিচালনা পরিষদের কাছের মানুষ।
বিজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নিয়োগ কমিটির সুপারিশ ও মতামতের ভিত্তিতে যথাযথভাবে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয়। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই।