ঘোড়াঘাটে পাটের দামে খুশি কৃষক
লোহাগড়ায় বেড়েছে পাটকাঠির কদর
প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
নড়াইলের লোহাগড়ায় চলতি মৌসুমে কৃষকদের মধ্যে বেড়েছে পাটকাঠির কদর। তাই পাটকাঠির যত্নে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এদিকে, পাটের ভালো দাম পাওয়া দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-
লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি জানান, নড়াইলের লোহাগড়ার বিভিন্ন গ্রামের পথে-ঘাটে বা বাড়ির আঙিনায় পাঁচ-ছয় বছর আগেও অবহেলা-অনাদরে পড়ে থাকত পাটকাঠি। সাধারণত লোকজন মাটির চুলায় রান্না আর পানের বরজের ছাউনি তৈরিতে এই পাটকাঠি ব্যবহার করতেন। বর্তমানে বিভিন্ন কাজে বাণিজ্যিকভাবে এর চাহিদা বেড়েছে। ফলে বেড়ে গেছে পাটকাঠির কদর।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার পাকা সড়ক, মাঠ-ঘাট যেখানে চোখ যায়, সেখানেই পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। অনেক চাষি এসব পাটকাঠি শুকিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রবীর কুমার দাস বলেন, এ বছর উপজেলায় ১২ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। ১ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত পাট থেকে প্রায় ১৫ হাজার টাকার পাটকাঠি পাওয়া যায়।
তিনি জানান, লোহাগড়ায় পানি সংকটের কারণে কৃষকরা উৎপাদিত পাট জাগ দিতে সমস্যায় পড়েন। পাটের রং ভালো না হওয়ায় বিক্রি করতে হচ্ছে কিছুটা কম দামে। কৃষক পাটকাঠিতে সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন। এখন চলছে পাটকাঠির পরিচর্যা ও কেনাবেচার কাজ। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে কিনছেন এই রুপালি কাঠি। একশ' আটি পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৫শ' থেকে ৬শ' টাকায়।
লাহুড়িয়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাটকাঠি বিক্রিতে তাদের আয় বেড়েছে। রাজশাহী, বরিশাল, পিরোজপুর থেকে অনেক ব্যবসায়ী পাটকাঠি কিনতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আসছেন।
রাজশাহীর পাটকাঠি ব্যবসায়ী ফরিদুজ্জামান বলেন, রাজশাহীতে পানের বরজে পাটকাঠির চাহিদা অনেক বেশি। তাই এখানে কম দামে পাওয়া যায় বলে প্রতি বছর তারা এ উপজেলায় পাটকাঠি কিনতে আসেন।
লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা আক্তার জানান বলেন, পাটের পাশাপাশি লোহাগড়াতে পাটকাঠির চাহিদাও বেড়েছে। পাট দিয়ে নানা ধরনের জিনিসপত্র তৈরি হচ্ছে। পাটকাঠি থেকে দাপ্তরিক সরঞ্জামাদিও তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া ঘর-গৃহস্থালির কাজে পাটকাঠির ব্যবহার দিনকে দিন বাড়ছে।
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, কৃষিপ্রধান এ দেশে এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট চাষে কৃষক দুরাবস্থার সম্মুখীন হলেও চলতি মৌসুমে পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় হেক্টরপ্রতি পাটের ফলন বৃদ্ধিসহ পাটের দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে পাট জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো ও ধোঁয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। অনেকেই পাট শুকিয়ে বাজারে বিক্রিও করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলার ৪ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১১৩ হেক্টর জমিতে দেশি তোষা জাতের পাট চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি পাটের গড় ফলন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩.১০ বেল। এ পরিমাণ জমিতে পাটের উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪৮০ বেল, যা গত বছর হেক্টরপ্রতি পাটের গড় ফলন ছিল ১০.৯ বেল।
উপজেলার বুলাকীপুর ইউনিয়নের কুলানন্দপুর গ্রামের পাট চাষি রায়হান জানান, গত বছর প্রতি মণ পাট বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৫শ' টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে ভালো মানের পাটের মূল্য ৩২শ' টাকা মণ ও নিম্ন মানের পাটের মূল্য ২৯শ' টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে পাটের ন্যায্য মূল্য পেয়ে চাষিদের পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রফিকুজ্জামান জানান, অন্য বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম অনেক বেশি। ন্যায্য মূল্য পেলে চাষিদের পাট চাষে আগ্রহ বাড়বে। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। আগামী বছর পাট চাষ বৃদ্ধিসহ ফলন আরও বাড়বে। পাট সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে কৃষককে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।