মনোহরদীতে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন
প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি
গত এক সপ্তাহ ধরে নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রচন্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। একদিকে প্রচন্ড গরম, অন্যদিকে ক্রমাগত বিদু্যতের লোডশেডিং। পলস্নী বিদু্যতের এই ভেলকিবাজিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রতি ঘণ্টায় কমপক্ষে একবার করে লোডশেডিং হচ্ছে। রাতে অসহনীয় লোডশেডিংয়ে ঘুমতে পারছেন না মনোহরদীবাসী।
জেলা বা পৌর শহরে বিদু্যৎ কিছুটা সময় থাকলেও শহরতলী ও গ্রামগঞ্জের অবস্থা চরম পর্যায়ের। চলতি আমন মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবরাহের কথা থাকলেও থেমে নেই লোডশেডিং। গেল মাসে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কম হলেও গত কয়েকদিন ধরে তা মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে।
কর্র্তৃপক্ষ বলছে, জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন সংকটের কারণে চাহিদার তুলনায় কম বিদু্যৎ সরবরাহ করায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণও বেড়েছে। নরসিংদী পলস্নী বিদু্যৎ কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম পাওয়ায় এই লোডশেডিং। সরবরাহ যা পায় তারা তাও সেটা প্রতিদিন সমান পায় না। তবে যতটুকুই পায় কর্তৃপক্ষ চায় তার সমবণ্টন করতে। এদিকে ঘন ঘন বিদু্যৎ আসা যাওয়ার কারণে ফ্রিজ, টেলিভিশন, ফ্যানসহ বিভিন্ন মূল্যবান ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা মনোহরদীবাসীর জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া অসহ্য গরমে বিদু্যৎ না থাকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গ্রাহকরা। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র এই গরমে লোডশেডিংয়ের ফলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সারাদিন পরিশ্রমের পর রাতে পরিপূর্ণ বিশ্রাম করতে না পারায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তাদের জীবন। গরম আর লোডশেডিংয়ের মধ্যে একটু স্বস্তির খোঁজে মধ্যরাতেও ঘরের বাইরে দেখা যায় অনেককে।
সাগরদী বাজারের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক হাবিবুর মিয়া বলেন, 'দিনে রাস্তায় থাহি। গরম হজম হইয়্যা গ্যাছে। এতদিন রাইতে একটু আরামে ঘুমাইছিলাম, এহন রাইতের ঘুমও হারাম হইয়্যা গ্যাছে। রাইতে তিন-চাইরবার কারেন যায়, ঘুমামু ক্যামনে।' গ্রাহকদের অভিযোগ, মনোহরদীতে বর্তমানে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টার অর্ধেকটা সময়ও মিলছে না বিদু্যৎ। আবার উপজেলা পর্যায়ে অনেক স্থানেই রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ২০ ঘণ্টা বিদু্যতের লোডশেডিং করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় সব এলাকায় বিদু্যৎ আসলে থাকে আধা ঘণ্টা, আর গেলে দুই ঘণ্টায়ও আসে না। বিদু্যতের এমন বেহাল দশায় গ্রাহকরা বলছেন তাদের সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে। বিবেকহীনভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলছে বিদু্যতের ভেলকিবাজি।
নরেন্দ্র পুর এলাকার বাসিন্দা মাছুম বিলস্নাহ বলেন, 'প্রচন্ড গরমে দিনে লোডশেডিং চলতে থাকে, রাতেও বিদু্যৎ থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে আমরা মনোহরদীবাসী অস্বস্তির মধ্যে আছি। রাতের লোডশেডিং মেনে নেওয়া যায় না। ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। বাচ্চারা পড়ালেখা করতে পারছে না।'
গরমের জন্য মনোহরদীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগই জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে মানুষের বেচা থাকাটাই অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এই লোডশেডিংয়ের কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে চান মনোহরদীবাসী। মনোহরদীবাসী পলস্নী বিদু্যতের কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন, যাতে এই তীব্র লোডশেডিংয়ের মাত্রা অতি দ্রম্নত সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়।