থানায় হামলার সময় ভারতে, তবুও মামলায় জেলে আ'লীগ নেতা
বাদীকে আদালতে তলব
প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি
আওয়ামী সরকারের পতনের দিন হামলার ঘটনা ঘটে রাজশাহীর গোদাগাড়ি থানায়। এ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলার ৬ নম্বর আসামি গোদাগাড়ি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিমুল হক নাসিমকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়। আবেদন করা হয়েছে রিমান্ডেরও। তবে আসামির আইনজীবীর দাবি, ঘটনার দিন দেশেই ছিলেন না নাসিম।
নাসিমের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন বিশ্বাস জানান, আসামি নাসিম গত ৩ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। চিকিৎসা শেষে তিনি ১৩ আগস্ট একই পথে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ভারতে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন সে সংক্রান্ত হাসপাতাল ও চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রও রয়েছে। ঘটনার দিন ৫ আগস্ট তিনি ঘটনাস্থল তো দূরের কথা; বাংলাদেশেই ছিলেন না। বিষয়টি আদালতকে জানানো হয়েছে।
নথিপত্রে দেখা গেছে, গত ৫ আগস্ট থানায় হামলার অভিযোগে ৩ সেপ্টেম্বর মামলাটি করেন গোদাগাড়ি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম। মামলাটি তদন্ত করছেন থানার আরেক এসআই আনোয়ার। এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, সকাল ১০টার দিকে এজাহার নামীয় ৪০ জন এবং অজ্ঞাত ৬০০ থেকে ৭০০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গোদাগাড়ি থানার প্রধান ফটকের সামনে হাজির হয়। আসামিরা থানার ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পুলিশের তিনটি গাড়িসহ ৫-৬টি গাড়ি ভাঙচুর করে।
এরপর থানার মূল ভবনে প্রবেশ করে অস্ত্রাগার ভেঙে অস্ত্র-গুলি লুট করে। প্রাণের ভয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। এজাহারে বর্ণিত অভিযোগ অনুযায়ী, হামলায় নেতৃত্ব দেন রাজশাহী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।
গোদাগাড়ি থানায় হামলার এ মামলায় আসামি করা হয়েছে বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শহীদুজ্জামান শাহিদ, সহ-সভাপতি সাইদুল ইসলাম, বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক মন্ডলকেও। এসব আওয়ামী লীগ নেতাকে গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে গোদাগাড়ি সদর উপজেলা গেটের সামনে থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
গোদাগাড়ি থানার হামলায় অন্য উপজেলার নেতাদের আসামি করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এসব আসামির আইনজীবীরাও বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতা নাসিমের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ২ সেপ্টেম্বর রাতে সদর উপজেলা গেটের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর রাতেই মামলা হয়। গত বুধবার তিনি গোদাগাড়ি থানার আমলি আদালতে আসামি নাসিমের জামিন আবেদন করেন। তিনি আদালতকে জানান, আসামি ঘটনার দিন দেশেই ছিলেন না। তিনি ভিসা এবং চিকিৎসার কাগজপত্র আদালতকে দেখান। ভারতে থাকা ব্যক্তি কীভাবে আসামি হলেন তা জানতে মামলার বাদী এসআই রেজাউল করিমকে তলব করেছেন আদালতের বিচারক লিটন হোসেন।
জানতে চাইলে মামলার বাদী এসআই রেজাউল করিম বলেন, 'ঘটনার সময় অনেক লোক ছিল। আমরা বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের নাম পেয়েছি। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তের মাধ্যমে যারা প্রকৃত জড়িত তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবেন।'
গোদাগাড়ি থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, 'আসামি নাসিমকে ৩ সেপ্টেম্বর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভারতে থাকা ব্যক্তি থানায় হামলার মামলায় কীভাবে আসামি হয়েছেন তা তদন্তেই জানা যাবে। এখনও তো মামলার তদন্ত হয়নি।'