কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় চলতি মৌসুমে পাটের চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। বাজারে পাটের যে দর, তাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। গত মৌসুমেও পাটের দাম পাননি, এবারও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। পাট বিক্রি করে খরচের টাকা উঠছে না। এতে প্রতিবিঘা পাট চাষে লোকসান হচ্ছে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা। তাই সরকারের কাছে পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন চাষিরা। উপজেলায় এ বছর ৩১৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ কম হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভেড়ামারায় ৪ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। এই ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এ বছর ৩১৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ কম হয়েছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বিঘায় ৮ মণ ধরা হলেও ফলন হচ্ছে ৫ মণ থেকে ৬ মণ।
জানা গেছে, পাট চাষে আগের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে। মজুরির ব্যয়, সার, কীটনাশক ও বীজসহ চাষাবাদের খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘা পাটের উৎপাদন খরচ প্রায় ১৪ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় পাট উৎপাদন হচ্ছে ৫ থেকে ৬ মণ। এক মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা পাট চাষে লোকসান হচ্ছে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা।
লোকসানে পড়া পাটচাষিরা বলেন, সার, বীজ, মজুরি ব্যয়, জমি লিজ খরচসহ সবকিছুর দাম বাড়ে। কিন্তু পাটের দাম বাড়ে না। এতে লোকসানে পড়েছেন পাট চাষিরা।
কৃষক মসলেম উদ্দিন বলেন, তার ৩ বিঘা জমিতে পাটের বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরির ব্যয়, লিজ খরচ ও পুকুর ভাড়া দিয়ে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। পাট উৎপাদন হয়েছে ১৬ মণ। ২ হাজার ২০০ টাকা দরে ১৬ মণ পাট বিক্রি করে ৩৫ হাজার ২শ' টাকা পান। এতে তার ৪ হাজার ৮শ' টাকা লোকসান হয়েছে। তিনি পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানান।
পাট চাষি ছানোয়ার হোসেন বলেন, পাট চাষ করে পোষাচ্ছে না। গত বছর লোকসান হয়েছে, এবারও লোকসানে পড়েছেন। পাটের দাম খুব কম। তার মতো প্রায় সব পাট চাষির লোকসান হচ্ছে। বাজারে ২১০০ থেকে ২৩০০ টাকা মণ পাট বিক্রি হচ্ছে। এবার পাটের চাহিদাও কম। পাট চাষিদের প্রতি সরকার নজর দিয়ে দাম বৃদ্ধি করুক। তা নাহলে লোকসানের ঝুঁকি নিয়ে আগামীতে অনেকেই পাট চাষ করা বন্ধ করে দেবে।
পাট ব্যবসায়ী তাহের উদ্দিন বলেন, পুরনো পাট গোডাউনে ভরা। অনেক ব্যবসায়ী বিগত মৌসুমের পাট বিক্রি করতে পারেননি। এজন্য এ বছর ঝুঁকি নিচ্ছেন না। চাষিরা লোকসানে পড়ে পাট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদা সুলতানা বলেন, গত বছর দাম না পাওয়ায় চাষিরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়েছে। সরকার ধান, চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও সার ছয়টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। কৃষক যেন ভালো দাম পান, এজন্য সরকার বিদেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করার পদক্ষেপ নিয়েছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে নতুন জাতের বীজ, সার, প্রণোদনা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শক সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, গত বছর পাট চাষিরা লোকসানে পড়েছিলেন। এ কারণে পাট চাষ কমেছে। এ ছাড়া খরার কারণে অনেকে পাট চাষ করেননি। পাট উৎপাদনে খরচ বেশি হচ্ছে চাষিদের। পাটের দাম বাড়ানো উচিত। চাষিদের মতো ব্যবসায়ীরা লোকসানের ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য পাট ক্রয়ে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম।