বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ফরিদপুর সদর উপজেলার মো. সিরাজুল ইসলাম ব্যাপারী (২৯)। এ ঘটনায় গত ২৯ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাসিবুল হাসান লাবলু একটি মামলা করেন।
আদালতের নির্দেশে গত ১ সেপ্টেম্বর এই মামলাটি নথিভুক্ত করেন বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। নিহত সিরাজুল ব্যাপারী ফরিদপুর সদরের ডিক্রির চর ইউনিয়নের তায়জুদ্দিন মুন্সির ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের ছেলে। মামলার বাদী হাসিবুল হাসান লাবলু ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের খলিশাডুবি গ্রামের বাসিন্দা। মামলায় তিনি নিজেকে নিহত সিরাজুলের খালাত ভাই দাবি করলেও নিহতের স্বজনরা মামলার বাদীকে চেনেন না।
ঘটনা ঢাকার হলেও মামলায় ফরিদপুর সদরে ২৩ জন, নগরকান্দায় ২৪ জন, সালথায় ৯ জন, বোয়ালমারী দুইজন ও আলফাডাঙ্গা উপজেলায় একজনের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। মামলায় ১২০ জনের নাম উলেস্নখ করে অজ্ঞাতপরিচয়ে আরও ৩০০ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই এই মামলার বাদী হাসিবুল হাসান লাবলু আসামিদের কারও কারও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মামলার আবেদনের কপি, ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশনামা, প্রাথমিক তথ্য বিবরণী পাঠিয়ে চাঁদা দাবি করে যোগাযোগ করতে বলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সালথার রামকান্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইশারত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ওইদিন (৫ আগস্ট) ফরিদপুরে সালথায় ছিলাম। কিন্তু রাজধানীর বাড্ডায় একটি হত্যা মামলায় আমাকে আসামি করে বাদী আমার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছেন। টাকা দিলে মামলা থেকে নাম কাটিয়ে দেবে, আর না দিলে আরও মামলা করা হবে বলে জানায়।'
ফরিদপুর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট সত্যজিৎ মুখার্জি জানান, তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও মামলার নথি পাঠিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
বাদীর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাবিবুর রহমান লাবলু সালথার খলিশাডুবি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। বর্তমানে কোনো পদে না থাকলেও বিএনপির রাজনীতি করেন বলে জানা গেছে। তার নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর লাবলু এলাকায় এসে চাঁদাবাজি শুরু করেন। বাড্ডা থানার হত্যা মামলায় ফরিদপুরের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে চাঁদাবাজি করার জন্য।
সালথা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আসাদ মাতুব্বর বলেন, 'ঢাকার ঘটনায় করা মামলায় ফরিদপুরে অবস্থান করা লোকদের আসামি করা বাস্তবসম্মত নয়। এ ধরনের মামলা দিয়ে নিরাপদ ব্যক্তিদের হয়রানি করার যুক্তি নেই। মামলার সূত্র ধরে কেউ অনৈতিক সুবিধা দাবির চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।' মামলার ব্যাপারে নিহত সিরাজুলের বাবা শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমার ছেলের মৃতু্যর ঘটনায় ঢাকার বাড্ডা থানায় কোনো মামলা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।' হাসিবুল হাসান লাবলু নামে এক ব্যক্তি সিরাজুলের খালাত ভাই পরিচয় দিয়ে মামলা করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, 'হাসিবুল হাসানকে আমি চিনি না। এই নামে আমাদের কোনো আত্মীয় নেই।'
এই মামলার বাদী হাসিবুল হাসান লাবলু দাবি করেন, নিহত সিরাজুলের মায়ের বোনের কোনো এক আত্মীয়ের সূত্রে তিনি খালাত ভাই। সিরাজুলের বাবার অনুমতি নিয়েই মামলা করেছেন। সিরাজুলের বাবা তাকে চেনেন না জানালে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। আসামিদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মামলার নথিপত্র পাঠিয়ে যোগাযোগের কথা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। মামলায় ঢাকার বাইরের লোকদের নাম যুক্ত করা সঠিক হয়নি বলেও জানান।