নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য চান না বেরোবির শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বেরোবি প্রতিনিধি
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর 'রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়' নামে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ২০০৯ সালে বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম 'বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর' করা হয়। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টি আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের দখলে ছিল।
অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের সরকারের বিভিন্ন পদধারী নেতাকর্মীকে ও আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীকেই বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের অনেকেই করেছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভেঙে দ্বাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম তুলতে দেখা গেছে আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমানকে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচজন উপাচার্য এসেছেন। কিন্তু কারো বিদায়ীই সম্মানের সঙ্গে হয়নি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে আবু সাঈদ নিহতের ঘটনা ও সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য পদত্যাগ করলেও বাকি চারজন বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের মুখে বিদায় নিয়েছেন। যার ফলে উপাচার্যদের এমন কর্মকান্ড ও তার সঙ্গে শিক্ষকদের সম্পৃক্ততার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান কোনো শিক্ষার্থী নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য চান না।
একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যত শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন সবাই আওয়ামী লীগের আমলে। সবাই আওয়ামী লীগের কোনো না কোনোভাবেই সমর্থন দিয়ে আসছেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা নিজেদের চেতনায় একাধিক সংগঠনেরও জন্ম দেন। সেখানে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, নীল দল, হলুদ দলসহ একাধিক সংগঠন তৈরি করে আওয়ামী সরকারের পাশে ছিল। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে সীমাহীন দুর্নীতি সংস্কৃতি তৈরি হয়ে আসছে।
কেন নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি চান না এমন জবাবে কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রমজান আলী বলেন, 'এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল না। আবু সাঈদকে নির্মমভাবে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে হত্যা করা হয়। কোনো শিক্ষক যদি ওই জায়গায় থাকত তাহলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না।'
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী হেলাল মিয়া বলেন, 'দেশের এই পরিস্থিতে দরকার সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ মানুষ। কিন্তু দেখা যায় সৎ-নিরপেক্ষ তাদের অনেকেরই উলেস্নখ্যযোগ্য তেমন গবেষণা পত্র নেই, ডক্টরেট অথবা পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রিও নেই। আবার যাদের এসব ডিগ্রি আছে তাদের মধ্যে অনেকেই দল করা। যারা আবার দলের বাইরে আছেন তারা অনেকেই শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পৃক্তহীন। এর বাইরে যারা আছেন তাদের শিরদাঁড়া প্রশ্নবিদ্ধ। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা চায় বাইরে থেকে সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ ও মেরুদন্ডযুক্ত মানুষ আমাদের ভিসি হয়ে আসুক।'
নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি নিয়োগ না চেয়ে শিক্ষার্থীদের এমন ক্ষোভ কেন এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, 'শিক্ষার্থীদের এমন আবেগকে আমি সমর্থন করি। কারণ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আপন করে নিতে পারেননি। কিন্তু যদি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়, দিন শেষে তার পালানোর সুযোগ নেই। চার বছর পর তাকে এখানে চাকরি করতে হবে। যার ফলে তার জবাবদিহিতা স্থায়ী জবাবদিহিতা হবে। ফলে কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মসূচিকে চটিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালাতে পারবেন না।'