ছয় জেলায় ৬ জনকে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা

প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
ছয় জেলায় নানা ঘটনায় ছয়জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চুয়াডাঙ্গা, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, ফেনীর পরশুরাম, ও সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে এসব হত্যার ঘটনা ঘটে। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা জানান, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় নেশাদ্রব্য কেনার টাকা না দেওয়ায় ছেলে শিশির আহম্মেদের বিরুদ্ধে তার বাবা আব্দুস সোবহানকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত আব্দুস সোবহান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি নৌ বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন। শনিবার আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার থানাপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দুপুরেই অভিযুক্ত শিশিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। গত বুধবার রাতে পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, গত মঙ্গলবার আব্দুস সোবহান ব্যাংক থেকে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা তোলেন। ওইদিন রাতেই ছেলের সঙ্গে তার গন্ডগোল বাধে। পরদিন বুধবার টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে বাবা ও ছেলের দিনভর হট্টগোল চলে। ওইদিন মাঝ রাতে আব্দুস সোবহানের আত্মচিৎকার শোনেন প্রতিবেশীরা। এরপর থেকে সোবহানকে বাইরে দেখেননি এলাকাবাসী। শনিবার বাড়ির দ্বিতল ভবন থেকে পচা গন্ধ বের হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে নিহতের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। নিহতের ভাইয়ের মেয়ে গুলশান আরার ভাষ্য মতে, তার চাচাতো ভাই শিশির বখাটে ও নেশাগ্রস্ত ছিল। নেশার টাকা না পেয়ে তার বাবার সঙ্গে ঝগড়ার এক পর্যায়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। পরে শনিবার পচা গন্ধ পেয়ে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করেছে। আলমডাঙ্গা থানার ওসি শেখ গণি মিয়া জানান, প্রতিবেশীদের খবরে নিহতের বাড়ি থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোবহানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছেলে শিশিরকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠিতে সাঈদুর রহমান স্বপন (৫৪) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে সদর উপজেলার শেখেরহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠি সদর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম। স্বপন উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে। জানা যায়, স্বপন সকাল ৯টায় শেখেরহাট লঞ্চঘাট মাজার মসজিদে একটি জানাজা শেষে শেখেরহাট বাজারে নাশতা করতে আসছিলেন। কিছুক্ষণ পরে রাস্তায় তার রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঝালকাঠি সদর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় সুলতান খান (৭০) নামের এক বৃদ্ধের মৃতু্য হয়েছে। শনিবার উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাঁঠালিয়া থানার ওসি নাসির উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরশুরাম (ফেনী) প্রতিনিধি জানান, ফেনীর পরশুরামে বাসার সামনে সরকারি ড্রেনের উপর দিয়ে হাঁটাকে কেন্দ্র করে ঝগড়াঝাঁটির এক পর্যায় মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন (৫৫) নামের এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে ও গলা টিপে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় আবুল হাশেম (৫৩) ও জাফর আহমেদকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার পৌর এলাকার দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত গিয়াস উদ্দিন পেশায় মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মানিক বাদী হয়ে পরশুরাম থানায় চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। আসামিরা হলেন- এছাক মিয়া (৪৫), মর্তুজা হোসেন আজিম (৩৫), আবুল হাশেম ও জাফর আহাম্মদ। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, বাসার সামনে সরকারি ড্রেনের উপর দিয়ে হাঁটাকে কেন্দ্র করে এছাক মিয়ার সঙ্গে ঝগড়াঝাটি হয়। এক পর্যায় গিয়াস উদ্দিনকে বাসা থেকে টেনে রাস্তায় নিয়ে এসে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যা করে এছাক। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক গিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন। পরশুরাম থানার ওসি শাহাদাত হোসাইন খান বলেন, নিহতের ছেলে বাদী হয়ে হত্যা মামলা করলে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরের কচুয়ায় নিজ ঘর থেকে আহসান উলস্নাহ (৩৫) যুবলীগ নেতার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকালে উপজেলার বিতারা ইউনিয়নের চাংপুর গ্রামের মজিদ মুক্তার বাড়ির নিজ ঘর থেকে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আহসান উলস্নাহ মৃত আব্দুল মতিনের ছেলে ও বিতারা ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য। পুলিশ জানায়, আশপাশের লোকজন আহসানের ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ঘরের ভেতর থেকে পচা গন্ধ পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের চাচাতো ভাই মাসুদ ভূঁইয়া জানান, আহসানরা ৪ ভাই ১ বোন। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। শুক্রবার আহসানের ঘর থেকে পচা গন্ধ পেয়ে বাড়ির লোকজন দরজা ধাক্কা দিলে দেখতে পান একটি মানুষের মাথা ও মুখবাঁধা এবং শরীরে কসটিপ পেঁচানো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পরে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করলে লাশটিকে আহসানের হিসেবে শনাক্ত করা হয়। কচুয়া থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে তার মৃতু্যর সঠিক কারণ জানা যাবে। রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে মুঞ্জিল শেখ (৫০) নামের এক মিশু গাড়ি চালকের হাত পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রাম থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত মুঞ্জিল শেখ ওই গ্রামের মৃত আছাব আলীর ছেলে। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সকালে রঘুনাথপুর গ্রামের ভুঁইয়াগাঁতী হতে সলঙ্গা যাওয়ার রাস্তার পাশে ইটের খামালের ওপর হাত পা বাঁধা একটি মরদেহ দেখতে পায় এলাকাবাসী। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহটি উদ্ধার করে। সলঙ্গা থানার ওসি রুবেল হোসেন জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।