কাঁচা ধানে ইঁদুরের হানা দিশেহারা বরেন্দ্রের কৃষক
ইঁদুরের কারণে দেশে বছরে ক্ষতি ৭০০ কোটি টাকার বেশি ফসল
প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
রাজশাহীর তানোরের বরেন্দ্র অঞ্চলে এবারে আমন ধানক্ষেতে ব্যাপকভাবে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ক্ষেতের কাঁচা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে ইঁদুর। আমনের মাঝামাঝি সময়ে ইঁদুরের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
চলছে ভাদ্র মাস। বৃষ্টির পানিনির্ভর বরেন্দ্র এখন সবুজে সবুজে ভরে উঠছে পুরো মাঠ। সেই সঙ্গে রঙিন হয়ে উঠছে প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন। মাঠজুড়ে এখন সবুজ স্বপ্নের ছড়াছড়ি। এমন সময় আমনের মাঝামাঝির মুহূর্তে ক্ষেতের কাচা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে ইঁদুরের দল। ইঁদুরের আক্রমণে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, ক্ষেতে পোকা আক্রমণ করলে কীটনাশক প্রয়োগ করে দমন করা যাচ্ছে। কিন্তু ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। তাই সরকারকে ইঁদুর দমনে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে। যেন কৃষকরা রক্ষা পায়। নাহলে ক্ষেতের অর্ধেক ফসল ইঁদুরের পেটে চলে যাবে।
রাজশাহী অঞ্চলের জেলা উপজেলা ও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা জানান, শুধু বিষ টোপ নয়, কলাগাছ, লাঠি কিংবা বাঁশের কঞ্চিতে পলিথিন বেঁধে দিলে ও রাতে ফসলের ক্ষেতে টায়ার পোড়ানোর পদ্ধতি ব্যবহার করলে ইঁদুর কিছুটা ভয়ে ক্ষেত ছেড়ে চলে যাবে। কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে পরামর্শ।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে পোকা দমনের পদ্ধতিতে পার্চিং-লগ, লাইন এবং ধোঁনছা গাছ লাগানো হয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হবে ৩ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের ওপর।
ইঁদুরের দ্বারা দেশে বছরে ক্ষতি হয় ৭০০ কোটি টাকারও বেশি ফসল। ২০১৪-১৫ সালে ইঁদুর দ্বারা মোট ৭২৩ কোটি ৭২ লাখ ৭ হাজার ৩৫৫ টাকার শুধু ধান, চাল ও গম ফসলের ক্ষতি হয়েছে। রাজশাহী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান কর্মকর্তা কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
আন্তজার্তিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৩ সালের এক গবেষণার উদাহরণ দিয়ে ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০ থেকে ৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে। তাই ইঁদুর প্রতিহত করতে সরকারসহ কৃষকদের সচেতন হবে।
রাজশাহীর মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামে কৃষক মনসুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় তার ক্ষেতে ধান অন্য সব বছরের চেয়ে ভালোই ছিল। কিন্ত তার ৩ বিঘা ধানের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতক কাঁচা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলেছে ইঁদুর। গোদাগাড়ীর উপজেলার চান্দালায় গ্রামের কৃষক তসিকুল ইসলাম জানান, তার ৮ থেকে ১০ শতক ক্ষেতের কাঁচা ধান কেটে ফেলেছে ইঁদুর। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে রাতে ক্ষেতের পাশে পুরনো টায়ার পোড়ানো, পটকা ফোটানো, বিষ টোপ ব্যবহার করেও ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। ইঁদুরের এমন সমস্যা শুধু কৃষক মনসুর রহমান ও তসিকুল ইসলামের একাই নয়, রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে চলতি আমন মৌসুমে অন্যসব বছরের চেয়ে এবার ইঁদুরের আক্রমণ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মুন্ডুমালা পৌর এলাকার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজিউল হক জানান ইঁদুর গাছে এমনকি অনেক সময় পানির ওপর খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধে বসবাস করে। এই ইঁদুর দাঁতের বৃদ্ধি রোধ করার জন্য সামনে যা পায় কেটে তছনছ করে দেয়। আমন ক্ষেতে গন্ধ জাতীয় কীটনাশক বোতলে বোতলে অল্প পানি মিশিয়ে রাখলে ইঁদুর ক্ষেত থেকে পালাবে এমন পরামর্শ কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে।