গাজীপুরে কারখানা শ্রমিক আন্দোলনে সুনির্দিষ্ট কোনো দাবি না থাকলেও সম্প্রতি একেক কারখানার শ্রমিকরা একেক ইসু্যতে শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। বিক্ষোভ-ভাঙচুর-অবরোধের মতো কর্মসূচি নিচ্ছেন কারখানার শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। এতে অনেক কারখানায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
এমতাবস্থায় শিল্পাঞ্চলে বৃহস্পতিবার থেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, শিল্পপুলিশ, বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে পরিস্থিতি অনেকাংশে স্বাভাবিক হলেও অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শিল্পকারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টিকারী সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তার নাম ঠিকানা বলছে না।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ি জোনের সহকারী কমিশনার সুবির কুমার সাহা জানান, 'সম্প্রতি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট কোনো ইসু্য নেই। একেক কারখানার শ্রমিকরা একেক ইসু্য তুলে শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা তৈরির পায়তারা করছে। কেউ বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা খুলে দেওয়া, চাকরি হারানো শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা, ওভারটাইম ও বাৎসরিক ছুটির টাকা বৃদ্ধি করা, নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা বৈষম্য দূর করা প্রভৃতি।
এ বিক্ষোভ-আন্দোলন-ভাঙচুর-হামলা চলাকালে এক শ্রেণির লুটেরা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আন্দোলনকে বেগবান এবং কারখানায় লুটপাট করে।
সম্প্রতি গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের সঙ্গে বিভিন্ন ঔষধ কারখানা, জুতা কারখানায়ও বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে।
গাজীপুর শিল্পপুলিশের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানান, 'সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা ডিউটি করলে ৩ ঘণ্টা ওভারটাইম, শ্রমিকদের নূ্যনতম মাসিক পনেরো হাজার টাকা বেসিক ধরে সব সুবিধা বহাল রাখা, কারখানার ম্যানেজমেন্টের ন্যায় শ্রমিকদের প্রতিবছর ২০% বেতন বৃদ্ধি, বেসিকের সমপরিমাণ ঈদ বোনাস প্রদান ও চাকরিতে হয়রানিবন্ধসহ ৮ দফা দাবিতে ৩ সেপ্টেম্বর বাটা জুতা কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া এলাকার নেক্সাস সোয়েটার কারখানার শ্রমিক স্বপন চন্দ্র রায় জানান, ' শ্রমিক নেতারা বাইরে থেকে দলবলসহ কারখানার এলাকায় গিয়ে নানা দাবির কথা বলে সাধারণ শ্রমিকদের তাদের মিছিল-বিক্ষোভে অংশ নিতে বলে। কথিত ওইসব নেতা-শ্রমিদের তারা চেনে না।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এবং শিল্পশ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি মো. সাইফুল আলম জানিয়েছে, 'নিটিং কারখানায় আগে পুরুষ শ্রমিক বেশি কাজ করত। আর পোশাক কারখানার সুয়িং কারখানায় নারী শ্রমিকরা বেশি কাজ করতেন। কিন্তু ডিজিটাল যুগে নিটিং কারখানায় জ্যাকার্ড মেশিন ঢুকে পড়ায় কম শ্রমিকে বেশি কাজ করা হচ্ছে। এতে ওইসব ক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে। এছাড়াও অনেক বন্ধ কারখানার শ্রমিকরাও তাদের চাকরির দাবিতে আন্দোলন করছেন। টিফিন বিল, নাইট বিল, ওভারটাইম ইত্যাদি দাবি যেগুলো কারখানার ভেতরেই মালিকদের সঙ্গে বসে মেটানো যায়। কিন্তু ওইসব শ্রমিকরা তা না করে রাজপথে নেমে অবরোধ-আন্দোলন করছেন।'