বন্যার প্রভাব শিশুদের ওপর বৃদ্ধি পাবে চর্মরোগ
হাটহাজারী স্বাস্থ্যকমপেস্নক্সে তিল ধারণের ঠাঁই নেই
প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
বমির উপর বমি কোনোমতেই বন্ধ হচ্ছে না। অবশেষে বুধবার রাতে ভর্তি করালেন হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপেস্নক্সে। তবে সিট পাননি, আপাতত মেঝেতে অবস্থান করছেন তার বাচ্চাকে নিয়ে। প্রতিবেদককে অসুস্থ জান্নাতুল ফেরদৌস (৬) এর মা নিলু আক্তার মেয়ের অসুস্থতা ও ভর্তির কারণ জানাতে গিয়ে এ কথা বলেন। মেখল ইছাপুর এলাকার শারমিন আক্তার একই রাতে এক বছরের শিশু আহম্মদ সানিকে ভর্তি করেছেন। শিশুর সমস্যা জ্বর ও খিঁচুনি। তিনিও অসুস্থ, সন্তানকে নিয়ে সিট খালি না থাকায় আছেন মেঝেতে। হাটহাজারী পৌরসভার মিরেরহাট এলাকার রিকশা চালক ইব্রাহিমের এক বছরের শিশু কন্যা উম্মে মাহেরাকে নিয়ে আছেন শনিবার রাত থেকে, তবে বন্ড সাক্ষর দিয়ে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু কন্যাকে নিয়ে স্বাস্থ্যকমপেস্নক্সে জরুরি বিভাগে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় দ্রম্নত চমেক রেফার করেন। তিনি চমেক নেননি। পরে বন্ড সাক্ষর দিয়ে চিকিৎসা চালাতে থাকেন। বর্তমানে মেয়ের অবস্থা কিছুটা ভালো।
সম্প্রতি হাটহাজারীতে ভয়াবহ বন্যায় সব কিছু স্বাভাবিক হতে থাকলেও বন্যার প্রভাব বেরিয়ে আসছে পানিবাহিত রোগের মাধ্যমে। বন্যার নোংরা ও দূষিত পানির কারণে মানুষের মধ্যে দেখা দিচ্ছে জ্বর, বমি, কফ, কাঁশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকস্ট, ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ নানা রোগ। তবে আক্রান্ত আশি ভাগই শিশু। উপজেলা ও পৌরসভার যে সব এলাকায় পানি ঢুকে কয়েকদিন অবস্থান করেছে সেখানে বসবাসরতরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে পর্যাপ্ত বেড না থাকায় মেঝেতে ভর্তি আছেন অনেক রোগী।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপেস্নক্সের তিল ধারণের ঠাঁই নেই। চিকিৎসক, নার্সরা সেবা দিতে ব্যস্ত। জরুরি বিভাগ, টিকেট কাউন্টার, ওষুধ বিতরণের রুম, এন সি ডি সি কর্ণার রুম কোথাও খালি নাই। সবখানেই রোগীদের উপচে পড়া ভিড়।
সিনিয়র নার্স শিমু তালুকদার জানান, সকাল ১১ পর্যন্ত ৪১ জন শিশু, মহিলা ১১ ও পুরুষ ১৪ জন ভর্তি আছেন। তবে ভর্তির সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় মেঝেতে ভর্তি দিতে হচ্ছে। একটা সিট খালি হতেই তার কয়েকগুন রোগী আসছে।
এদিকে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত ছাড়াও পেট ব্যথায় আক্রান্ত মহিলাদের উপস্থিতিও রয়েছে অনেক। অন্যদিকে বিভিন্ন রোগী ও তার স্বজনরা জানান, হাটহাজারী স্বাস্থ্যকমপেস্নক্সে কেবল হাটহাজারী উপজেলার নয় এখানে নাজিরহাট, রাউজানের গহিরা এলাকা থেকেও রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। রাউজান উপজেলার গহিরা এলাকার জান্নাত আক্তার তার ১১ বছরের ছেলেকে নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ভর্তি আছেন। আট মাসের শিশু রামিছাকে নিয়ে নাজিরহাট আব্দুলস্নাহপুর এলাকার ফাতেমা বেগম বুধবার সকাল থেকে ভর্তি আছেন। জানতে চাইলে তারা বলেন, এখানের পরিবেশ এবং চিকিৎসাসেবা ভালো। শিশু কনসালট্যান্ট ডা. রাশেদুল ইসলাম বলেন, বন্যার নোংরা ও দূষিত পানির কারণে শিশুরা পানিবাহিত রোগের আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। সপ্তাহ দশদিন পর এর প্রভাব কমে গেলেও চর্মরোগ বেড়ে যাবে। বিভিন্ন বয়সী নারীদের পেট ব্যথার বিষয়ে বলেন, এটার দুটো কারণ প্রথমত নারীরা প্রয়োজনের চাইতে পানি কম পান করেন, দ্বিতীয়ত ক্রিমির ওষুধ না খাওয়া। প্রতিকার হিসেবে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পানি পান এবং তিন চারমাস অন্তর ক্রিমির ওষুধ খেতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্যকমপেস্নক্স ৫০ শয্যা থেকে অবশ্যই ১০০ শয্যা প্রয়োজনে আরও বেশি শয্যায় উন্নত করতে হবে।