প্রতিবন্ধীদের স্মার্ট কার্ড, বিধবাভাতা, বয়স্কভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ নানা ধরনের ভাতাভোগিদের কার্ড থাকে চেয়ারম্যানের কাছেই। শুধু তাই নয় ভিজিএফ, ভিজিডির চাল উত্তোলন ও টিসিবির পণ্য উত্তোলনের মতো সহজ বিষয়গুলোও চেয়ারম্যান তার পেটুয়া বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন। অর্থাৎ কয়েক হাজার অসহায় মানুষের ভাতা চেয়ারম্যান উত্তোলন করে থাকেন। উত্তোলনের পর মন চাইলে নাম মাত্র কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন।
গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার ৩নং সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন সুইটের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, এসব টাকা দিয়েই তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন কয়েকশ' যুবকের একটি পেটুয়া বাহিনী। এছাড়াও চেয়ারম্যানের রয়েছে আইভি রহমান নামের এক নারীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি টিম। যারা একটি এনজিও'র চাকরির বরাত দিয়ে বিভিন্ন ভাতাভোগিদের দোরগোড়ায় পৌঁছে নানাভাবে ভিক্টিমাইজ করে চেয়ারম্যানের পকেটে লাখ লাখ টাকা ঢুকানোর সুযোগ করে দেয়।
ভুক্তভোগীদের দাবি সাঘাটা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাই এসবের খলনায়ক। তার কৌশলেই হয় এসব অনিয়ম। শত-শত ভাতাভোগিদের কার্ড মোশাররফ হোসেন সুইট চেয়ারম্যান ও তার পেটুয়াবাহীনির নিয়ন্ত্রনে থাকার বিষয়ে বিভিন্ন সময় মৌখিক অভিযোগ দিয়ে কোন ফল পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে এই কর্মকর্তা অফিস থেকে বের করে দেন। সাঘাটা গ্রামের প্রতিবন্ধী এজাদুল ইসলাম বলেন, ' আইভি কার্ড করে দেওয়ার জন্য আমার কাছে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। কার্ড হওয়ার পর ৩ দফায় টাকা এসেছে। এক টাকাও আমায় দেয়নি। স্মার্ট কার্ড ও সিম কার্ড চেয়াম্যানের কাছেই থাকে। ওরাই সব তুলে নেয়।'
প্রতিবন্ধী আব্দুল হাই সরদার বলেন, 'আমি মৃগী রোগি, মৃতু্যর আগের দিন পর্যন্ত প্রতিদিন আমাকে জিপটল সিআর নামের টেবলেট খেতে হবে। মনে করেছিলাম প্রতিবন্ধী কার্ড হলো, এখন তিন মাস পরপর যে টাকা পাবো তা দিয়ে কমপক্ষেও ওষুধটা কিনতে পারব। কিন্তু আমও গেল, ছালাও গেল। কার্ড করে দেওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। সেটাও গেলো। এখন যে টাকা আসে তা চেয়ারম্যানরাই তুলে নেয়।' এরকম অর্ধশত প্রতিবন্ধী, বিধবা, বয়স্ক ও মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীর সঙ্গে কথা বলে উঠে আসে এই নির্মম চিত্র।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আইভি রহমান বলেন, 'আমি এসকেএস নামক একটি এনজিওতে কাজ করি। এগুলোর সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই আর টাকা নেওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।' তবে তিনি আরও বলেন, 'আমি কিছু কাগজপত্র গোলাম মেম্বারকে দিয়েছিলাম, তিনি কি করেছেন জানি না।'
কথা হয় মোশাররফ হোসেন সুইটের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে আনিত এসব অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। কারণ একজনের ভাতার টাকা অন্য কেউ উঠানোর সুযোগ নেই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ভোটের সময় আমাদের এখানে দুটি দল তৈরি হয়ে গেছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করছে।' সাঘাটা উজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, 'এসব বিষয় আমাদের জানা নেই। আমাদের কাছে ভূক্তভোগিরা লিখিতভাবে অভিযোগ করলে তা যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'
সাঘাটা ইউএনও ইসাহাক আলী বলেন, 'বিষয়টি আপনার কাছেই জানলাম। এ পর্যন্ত কোন ভূক্তভোগি আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করব। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।'
গাইবান্ধার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান বলেন, 'কোন চেয়ারম্যান ভাতাভোগীদের কার্ড নিজের কাছে রাখতে পারেন না। এটি অপরাধ। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।'