শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
রাজারহাটে বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

'স্বামীর ভিটা গেল, শ্বশুরের ভিটাও গেল, এখন কই যামু'

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম)
  ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
'স্বামীর ভিটা গেল, শ্বশুরের ভিটাও গেল, এখন কই যামু'

'স্বামীর ভিটাও গেল, শ্বশুরের ভিটাও গেল, এখন আমরা কই যামু। আপনেরা আমাদের থাকনের ব্যবস্থা করেন।'

এসব কষ্টের কথা বললেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাবখাঁ গ্রামের গৃহবধূ নাজমা বেগম। তার স্বামী ছমির উদ্দিনও বলেন, 'এই নিয়া তিনবার বাড়ি ভাঙল। এখন থাকনের কোন জায়গা নাই। আমাগো বাঁচান।'

বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক। তিনি বলেন, '৬-৭টা বাড়ি ভাঙার খবর করার জন্য সাংবাদিক আসা লাগবে! আমি কোনো বক্তব্য দিবো না। এমন ভাঙন কত হয়। লিখি কি হবে! আপনারা যান। আমি কোন কথা বলবো না।'

গত ১৫ দিন ধরে তিস্তা নদীর ভাঙনে এই এলাকার সরিষাবাড়ি শ্যালোঘাট থেকে পূর্বে চর খিতাবর্খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত তীব্র ভাঙন চলছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু'দিকে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও এখানে রঙধনু আকারে ভাঙছে সর্বগ্রাসী তিস্তা। এলাকার সাবেক মেম্বার শহিদুল আলম বলেন, 'গত ১৫ দিনে এখানে ৯টি বাড়ি ভেঙেছে। ভাঙনের মুখে খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৫০ থেকে ৬০টি বাড়ি। গত ৭ দিনে এখানে ভেঙেছে ফকির উদ্দিন, সোনামিয়া, মোন্নাফ, চাঁদমিয়া, মতিয়ার, আতিয়ার, আনম, আজিজুল ও বাবলুর বাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) অনুরোধ করলেও তারা কর্ণপাত করছে না।'

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল ভাঙনকবলিত মানুষের দুর্দশা। নদী এই শান্ত তো, এই আবার ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। গ্রামের ফসলি জমি চলে যাচ্ছে নদী গর্ভে। কৃষকের চোখে মুখে বসতবাড়ি আর জমি হারানোর বেদনা। কিন্তু কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসহায় ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছেন তারা।

কৃষক হামিদ আলী জানান, 'আমার এক একর আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন আমার খাওয়ার জমি নাই। ছেলেমেয়ে নিয়ে এখন পথে বসার মতো অবস্থা।'

জাহেদা বেগম জানান, 'নদী ভাঙতে ভাঙতে শেষ মাথায় চলে আসছি। এখন মানুষের হাত-পা ধরেও থাকনের জায়গা পাইছি না। কই যামু আপনেরা কন!'

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, 'বাজেট সংকটের কারণে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা দিতে পারছি না। তবে স্কুলটি রক্ষায় ইতোমধ্যে তিনশ' জিও ব্যাগ ফেলেছি। আরও জিও ব্যাগের জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এখন সীমিত আকারে পাচ্ছি। ফলে ইচ্ছে থাকলেও সব ভাঙনকবলিত এলাকায় যেতে পারছি না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে