ভোগান্তিতে চালকরা
রায়গঞ্জে বন্ধ পেট্রোল পাম্প চাকরিহারা ২০ কর্মচারী
প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
বন্ধ করে দেওয়া হলো সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের সিকদার ফিলিং স্টেশন। গত সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি পত্র দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী রাকিবুল ইসলাম সিকদার। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটর সাইকেলসহ ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। সরেজমিন পেট্রোল পাম্পটি বন্ধ ঘোষণা দেওয়ার পর মোটর সাইকেল চালকদের তেলের জন্য লাইন ধরে থাকতে দেখা গেছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ৪ লেন প্রকল্পের আওতায় মহাসড়ক ঘেঁষে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করার কারণে পাম্পটিতে ছোট-বড় ট্রাক, বাসসহ অন্য যানবাহন তেল নিতে পারছে না। পাম্পটির তেল মেশিন ঘেঁষে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করার কারণে অকেজো হয়ে পড়ে আছে যন্ত্রগুলো।
এদিকে পেট্রোল পাম্পটি ঘুরে ডিজেল, পেট্রোল আর অকটেনের জন্য হাহাকার দেখা গেছে। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিশেষ করে বিপাকে পড়েছে দামি প্রাইভেটকার ও বিলাসবহুল গাড়িগুলো।
সিকদার ফিলিং স্টেশনে কাজ করা ক্যাশিয়ার শুকুর আলী বলেন, 'অনেক পুরনো এই প্রতিষ্ঠানটিতে আমি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কাজ করছি। কিন্তু পাম্পটির সামনে সরকারিভাবে প্রাচীর নির্মাণের কারণে কোনো যানবাহনে তেল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মালিক পক্ষ বার বার ব্যবসায় লসে থাকার কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানে আমিসহ প্রায় ২০ জন কর্মচারী রয়েছি। আমাদের এখন কি হবে, পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা কিভাবে চলব। তাই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সরেজমিন তদন্তসাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানটির কথা ভেবে সীমানাপ্রাচীর অপসারণ দাবি জানাচ্ছি।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওই পাম্পে প্রতিদিন ডিজেল ৬-৯ হাজার লিটার, পেট্রোল ১ থেকে দেড় হাজার লিটার, অকটেন ৩-৫শ' লিটার ও মবিল ২০-৩০ লিটার বিক্রি হতো। তবে সরকারিভাবে প্রাচীর নির্মাণের পর প্রতিদিন গড়ে ডিজেল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ' লিটার, পেট্রোল ৫ থেকে ৬শ' লিটার বিক্রি হলেও মবিল বিক্রি নেই বললেই চলে। বেচাকেনার এমন চিত্র হওয়ায় ধ্বংসের দিকে উপজেলার বৃহৎ এই ফিলিং স্টেশনটি। যেখানে মাসিক বেতনভুক্ত প্রায় ২০ জন কর্মচারী কাজ করে চলেছেন ১৯৯৬ সাল থেকে।
পেট্রোল পাম্পটিতে মিটার ম্যান হিসেবে কাজ করেন রফিক আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি এখানে ২৪ বছর ধরে কর্মরত। হঠাৎ পাম্পটি বন্ধ হওয়ায় চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ চোখে পড়ে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'দীর্ঘ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখেই ছিলাম। কিন্তু বন্ধ হওয়ার পর এখন আমাদের কি অবস্থা হবে। আমরা প্রতিষ্ঠানটি খুলে দেওয়ার অনুরোধ করছি।'
প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারীরা রাকিবুল ইসলাম সিকদার বলেন, দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে আমার আওতাধীন ফিলিং স্টেশনটি অধিগ্রহণ করা হয়। রাস্তা মেরামতের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ পূরণ করা হলেও আমি ব্যবসায়িকভাবে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। প্রথমত সম্পূর্ণ ফিলিং স্টেশনটি আমাকে আবার প্রতিস্থাপন করতে হয়েছে। পরে ফিলিং স্টেশনে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য আগত যানবাহন এবং জ্বালানি গ্রহণ শেষে যানবাহন বাউন্ডারি-প্রাচীরের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি রাস্তা থেকে আমার পাম্পটি মানুষ ও পরিবহণের নজরের বাইরে। ফলে ফিলিং স্টেশনটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।'
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান বলেন, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ বন্ধে ও নির্মাণাধীন প্রাচীর অপসারণ দাবিতে স্থানীয়রা একটি মানববন্ধন করেছে। আমি আপাতত প্রাচীর নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। ইতোমধ্যে ফিলিং স্টেশনটি বন্ধের বিষয়ে লিখিত পত্র দিয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।'