রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। দ্রম্নত উপাচার্য নিয়োগের দাবি শিক্ষার্থীদের।
এদিকে, গত ২৯ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত পত্রের পরামর্শ অনুযায়ী জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর ডিনস কমিটির সভায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. মোরশেদ হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। প্রাথমিকভাবে তারা সম্মতি জানালেও পরে শিক্ষার্থীদের একাংশ আপত্তি জানান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাবিধ নেতিবাচক মতামত ব্যক্ত করেন।
জানা যায়, প্রফেসর ড. মোরশেদ হোসেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি। এ ছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা-বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। এটি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
যার ফলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে প্রফেসর ড. মোরশেদ হোসেন গত ২ সেপ্টেম্বর শারীরিক অসুস্থতা উলেস্নখ করে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, বিভাগীয় প্রধান/প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থীদের মতামত প্রদানে বিভাজনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কোনো অধ্যাপককে সাময়িকভাবে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত করা যুক্তিযুক্ত মনে করা হয়নি। সভায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শিগগির উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার নিয়োগের দাবি জানান তারা।
জানা যায়, ২ সেপ্টেম্বরের ডিনস কমিটির মিটিং চলাকালীন একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রম্নপ হয়ে তারা বাকবিতন্ডায় জড়ায়। মিটিং শেষে বিষয়টি হাতাহাতি পর্যন্ত চলে যায়। পরে বিষয়টি নিরসনে শিক্ষার্থীদের একাংশ সন্ধ্যায় স্বাধীনতা স্মারকে আলোচনার ডাক দেন। এ সময় বিভিন্ন বিষয়ে পুনরায় মতবিরোধ দেখা দিলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়। একপর্যায়ে কথা কাটাকাটি ও উচ্চবাচ্যের ঘটনা ঘটে এবং মারমুখী পরিস্থিতি তৈরি হয়।
শিক্ষার্থীদের একাংশ জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেরিত চিঠি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক কাউকে জরুরি সাময়িক প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব দিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। আরেকাংশ দাবি করেন, দ্রম্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ দিয়ে এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। প্রয়োজনে ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে ছিলেন ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের গোলাম রহমান শাওন। তিনি বলেন, 'আমি, সুমন ও আমার এক বন্ধু আমাদের ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করি। আমরা সারজিস ভাই, বাকের উনাদের সঙ্গে মিটিংও করি। পরে আবু সাঈদ ভাই, হাবিব ভাই ও সোহাগ ভাই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন। কিন্তু সোহাগ ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ থাকত। তিনি বামদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপরও আমরা আন্দোলন চালিয়ে গেছি। কিন্তু গতকাল সিন্ডিকেট রুমে ডিনদের সঙ্গে ওদের উচ্চবাচ্য কথাবার্তা আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে। মিটিং শেষে তারা আবার আমাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়ায়। আমাদের সঙ্গে হাতাহাতিও করে। ওরা রাজনৈতিক কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে।'
এই জটিলতা থেকে উত্তরণের উপায় জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উমর ফারুক বলেন, 'এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ করা দরকার। উচ্চশিক্ষায় যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, বেরোবির যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা নিরসনের জন্য দ্রম্নত একজন উপাচার্য নিয়োগ করা রাষ্ট্রের কাছে আমাদের দাবি।'