ডাক্তারসহ জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের চিকিৎসাসেবা। প্রায় ৩ লাখ জনবসতির চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে অনুমোদিত চিকিৎসক ২৭টি পদের ২৩টিই শূন্য। মাত্র ৪ জন ডাক্তার দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। শূন্য রয়েছে কার্ডিওলোজি, অর্থোপেডিক্স, সার্জারি, ইএনটি, অপথোমেলোজি ও সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক পদ। শিশু, অ্যানেসথেশিয়া ও গাইনি বিভাগে চিকিৎসক পদ শূন্য। ফলে এক রকম বন্ধ রয়েছে জরুরি প্রসূতি সেবাসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা। টেকনিশিয়ান ও অপারেটরের অভাবে পড়ে আছে এক্সরে, ইসিজি ও সনোরোজিস্ট মেশিন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৮ জনের জায়গায় রয়েছে মাত্র একজন।
চিকিৎসাসেবায় জেলার একসময় প্রথম হওয়া এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চিকিৎসা নিতে আসার রোগীদের বিস্তর অভিযোগ। রোগীরা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী ৫ টাকা মূল্যের কুপন সংগ্রহ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসকদের সাক্ষাৎ পান না। জিজ্ঞাসা না করা পর্যন্ত চিকিৎসক বসবে কিনা অথবা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা মিলবে কিনা তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। জিজ্ঞাসা করলে বলে চিকিৎসক বাইরে কমিউনিটি সেন্টার পরিদর্শন করছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত চিকিৎসক না থাকলে তার চেম্বারের সামনে নোটিশ দেওয়ার বিধান রয়েছে অথবা টিকিট কাটার আগে রোগের বিবরণ অনুযায়ী চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকলে তা রোগীদের অবগত করার বিধান রয়েছে।
প্রশাসনিক কাজ, ডেপুটেশন থাকায় হাসপাতালে রোগীদের অন্যান্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মরত ডাক্তার, নার্সদের। জনবল সংকটের কারণে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার কথা উলেস্নখ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ কমিটির অন্য সদস্যের সমন্বয়ে চিকিৎসাসেবার মান নিশ্চিতে মনিটরিং করার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান চারঘাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে ১০টার পরও হাসপাতালের আউটডোরে কোনো চিকিৎসক আসেননি। চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মইনুদ্দীনের ছেলে অপু জানান, 'এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা নাই বললেই চলে। সকাল থেকে টিকিট কেটে চিকিৎসকের অপেক্ষায় দীর্ঘসময় বসে থাকতে হয়। এ ছাড়া দিনে কয়েকজন চিকিৎসকের দেখা মিললেও রাতে চিকিৎসকের দেখা মেলা ভার। এ ছাড়া তালিকা বোর্ড অনুযায়ী দৈনন্দিন ওষুধ বিতরণ করা হয় না এবং তারিখ অনুযায়ী ওষুধের তালিকা বোর্ড হালনাগাদ করা হয় না। ডাক্তারদের অনুপস্থিতিতে ভাড়াটে, বহিরাগত মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্স ও ওয়ার্ডবয় দিয়ে চলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম।'
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ডাক্তার সংকটে স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের চিকিৎসাসেবা সাময়িক ব্যাহত হচ্ছে। তবে বিভিন্ন পদের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩ জন জুনিয়র ডাক্তার অর্ডার পাস হয়েছে। শিগগিরই চিকিৎসক সংকটের সমস্যা সমাধান হবে।