গাজীপুরের কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। উপজেলা শহরের বাসা-বাড়ি ও সদর বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বাজারঘেঁষা নদীর পাড়ে। এ কারণে এক সময়ের খড়স্রোতা শীতলক্ষ্যা নদী ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে পরিবেশ ও নদীর পানি। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদিরা অভিযোগ করলেও কোনো রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কাপাসিয়া সদর বাজার ও আশপাশের বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা ও বিভিন্ন বর্জ্য যাচ্ছে নদীতে। বাজার সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় বানিয়ে ফেলা হয়েছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। বাজারের কসাইখানার বর্জ্য, পশুর উচ্ছিষ্ট ও মুরগির নাড়িভুঁড়ি, দইয়ের টালি, আখের ছোবরা, পচাগলা ফলমূলসহ নানা ধরনের বর্জ্য নদীর পাড়ে এবং নদীতে সরাসরি ফেলা হচ্ছে। এমন কি মাঝে-মধ্যে একটি ভ্যান বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য এনে স্তূপাকারে রেখে যাচ্ছে নদীর পাড়ে। এসব ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিন গিয়ে পড়ছে নদীর পানিতে। নদীর পাড়েও জমা হয়েছে পলিথিন ও ময়লার বিশাল স্তূপ।
পাশেই রয়েছে খেয়াঘাট। খেয়া পাড় হয়ে বাজারে আসা কয়েকজন জানান, বাজার করতে এলে নাকে রুমাল ধরে আসতে হয়। উদ্ভট দুর্গন্ধে কাঁচাবাজার এলাকায় যাওয়া যায় না। এসব ময়লা-আবর্জনায় রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে। বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা নদীর পাড়ে ফেলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা বাজারের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির লিটন, হাবিবুর রহমান ও জামাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, নদীর পাড়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলে প্রথমে ভরাট করা হয়। এরপর দেখা গেছে, এলাকার বা বাজারের কয়েকজন প্রভাবশালী এই জায়গা দখলে দোকান করে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এ ছাড়াও আগে আমরা এই শীতলক্ষ্যার পরিষ্কার পানিতে গোসল করতাম। বর্তমানে শ্রীপুর ও ভালুকার বিভিন্ন শিল্প কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত দূষিত পানি ও কাপাসিয়া বাজারের ময়লা-আবর্জনা শীতলক্ষ্যার পানির সঙ্গে মিশে কালো রং ধারণ ও পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়েছে। নদীতে নামলেই শরীর চুলকায় এবং বিভিন্ন খোশ-পাঁচড়া বের হয়।
বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম শাহীন বলেন, বাজারের ময়লা-আবর্জনা রাখার মতো নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে নদীর পাড়েই এসব ফেলা হচ্ছে। বৃষ্টির সময় এই ময়লা-আবর্জনা শীতলক্ষ্যা নদীতে যায়। ফলে নদীর পানি অনেকটা দূষিত হচ্ছে। প্রশাসন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে বাজার ব্যবসায়ীরা আশাবাদী। আর দীর্ঘদিন আগে থেকেই দেখা গেছে, নদীর তীরে ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট করে এর সুবিধা নিতেন একটি প্রভাবশালী মহল। তারা ভরাট হওয়া জায়গায় অবৈধভাবে দোকান বানিয়ে মোটা অংকের টাকায় হস্তান্তর করতেন। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো হবে, যেন বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য অন্য নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ. কে. এম লুৎফর রহমান বলেন, কাপাসিয়া বাজারের ইজারাদার বাজার ও আশপাশের বাসা-বাড়ির এসব ময়লা-আবর্জনা নদীর তীরে না ফেলে অন্যত্র কোনো জায়গায় ফেলতে পারেন। এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে পরিবেশের অনেকটা ক্ষতি হচ্ছে।