বেঁধে দেওয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুলস্নাহকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়ে ওয়াসার ভবন ঘেরাও বিক্ষোভ-কর্মসূচি পালন করে। এ সময় এমডির সমর্থক ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে উত্তেজনা এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এর আগে আওয়ামী লীগের দালাল আখ্যা দিয়ে ওয়াসা এমডির পদত্যাগ দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারীরা। কিন্তু তাতে পদত্যাগের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি এমডি ফজলুলস্নাহ। তার দাবি সরকার তাকে নিয়োগ দিয়েছে। এজন্য সরকারের সিদ্ধান্ত বা আদেশ ছাড়া তিনি পদত্যাগ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওয়াসার এমডির কার্যালয়ে সামনে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিলে এমডির সমর্থক হিসেবে পরিচিত প্রায় ২০ থেকে ৩০ জনের একটি দল পাল্টা অবস্থান নেয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এমডি সমর্থকদের তোপের মুখে পিছু হটে আসে আন্দোলনকারীরা। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া এমএ হানিফ নোমান বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসায় দীর্ঘদিন যে অনিয়ম হয়ে আসছে আমরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। এমডির অনিয়মে বিরুদ্ধে কথা বলায় তিনি তার সমর্থক নামে কিছু সন্ত্রাসীদের আমাদের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক স্স্নোগান দিয়ে এমডি অফিসের সামনে আমাদের ওপর হামলা করে তারা।
আবদুল মহিন নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, গত ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রাম ওয়াসার সব নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজনই নিয়োগ পেয়েছে। যে ৩০০ অস্থায়ী শ্রমিক আছে তাদের বাদ দিতে হবে। নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মেধাবীদের নিতে হবে।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুক্ত কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও (ক্যাব)। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, শেখ হাসিনার দোসর চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডি ফজলুলস্নাহর পদত্যাগ দাবিতে রোববার ঘোষিত ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ওয়াসার এমডি পদত্যাগ করেনি, সরকারের পক্ষ থেকেও সরানো হয়নি তাকে। এমতাবস্থায় সচেতন নগরবাসী ওয়াসা এমডি ফজলুলস্নাহকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা করছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুলস্নাহ বলেন, 'আমি কারও চাপে পদত্যাগ করব না। সরকার চাইলে আমি পদত্যাগ করব। আমি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করিনি। একটি প্রকল্পেও অর্থ আত্মসাৎ করেছি এ ধরনের প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না। চট্টগ্রাম ওয়াসার এক জরাজীর্ণ অবস্থায় আমি ২০০০ সালে দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নেওয়ার সময় উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১২ কোটি লিটার পানি। বর্তমানে ৫৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদনে সক্ষম করেছি। চট্টগ্রাম শহরের ৯৫ শতাংশ মানুষ ওয়াসার পানি পাচ্ছে। মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ পানি পাচ্ছেন না। বঞ্চিতদের জন্যও প্রকল্প নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উলেস্নখ্য, চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডি ফজলুলস্নাহর পদত্যাগ দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হয় গত সোমবার। কিন্তু আন্টিমেটামের সময়ের মধ্যে ওয়াসা এমডি পদত্যাগ করেনি, সরকারের পক্ষ থেকেও সরানো হয়নি তাকে। এমতাবস্থায় সচেতন নগরবাসী ওয়াসা এমডি ফজলুলস্নাহকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা করে।
১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া একেএম ফজলুলস্নাহ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান একেএম ফজলুলস্নাহ। সেই থেকে ১৫ বছর ধরে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। গত বছরের অক্টোবরে সাতবারের মেয়াদ শেষ হয়েছিল তার। কিন্তু ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দুই মাস আগে তাকে আবার নিয়োগ দিয়েছে সরকার।