হবিগঞ্জে ২৫০ শয্যা ভবন নিয়ে সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে দ্বন্দ্ব
প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মো. নূরুম্নল হক কবির, হবিগঞ্জ
ভবন ব্যবহার নিয়ে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি উপযুক্ত সিদ্ধান্তের অভাবে নানা সংকটে ভুগছে। কয়েক বছর ধরে চলতে থাকা এ মতবিরোধ মঙ্গলবার দুইপক্ষের স্মারকলিপি প্রদান ও পাল্টা চিঠির মধ্য দিয়ে দ্বন্দ্বে রূপ নেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার ক্যাম্পাস স্থানান্তরের জন্য গতকাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সুনির্মল রায়কে চিঠি দেন; একইদিন আটতলা ভবনের পুরোটা পাওয়ার দাবিতে হাসপাতালে স্মারকলিপি দিয়েছে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, স্বল্প সময়ের জন্য কলেজ ক্যাম্পাস হিসেবে আটতলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ৭-৮ বছর অতিবাহিত হলেও সেটি স্থানান্তর করা হয়নি।
এখন সপ্তম তলায় উত্তর পাশে আইসিইউ ও অন্যপাশে ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে। সপ্তম তলায় অপারেশন থিয়েটার, স্টেরিলাইজেশন ও পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারের কোনো ব্যবস্থা নেই। ছাত্রছাত্রীদের কেবিন ফ্রি করার ক্ষমতাও কর্তৃপক্ষের হাতে নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হাতে।
নতুন ভবনের নিচতলার উত্তর পাশে রেডিওলজি ইউনিট ও সমাজসেবা অফিসের কার্যক্রম চলমান। দক্ষিণ পাশে জরুরি বিভাগ স্থানান্তরের প্রক্রিয়াও চলছে। জরুরি বিভাগ স্থানান্তর হলে দক্ষিণ পাশ প্রয়োজন হবে সন্ধানী ও মেডিসিন ক্লাব কক্ষের জন্য।
এছাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভবন ভাড়া নিয়ে মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাস স্থানান্তরের কথা। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তা করা যাচ্ছে না; ফলে হাসপাতালে রোগী দুর্ভোগ বেড়েছে। এ পরিস্থিতে ক্যাম্পাস ভাড়া নিয়ে কলেজ পরিচালনা করা অতীব জরুরি।
একইদিন আটতলা ভবনের পুরোটা মেডিকেল কলেজকে দিয়ে দেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে উলেস্নখ করা হয়, মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা সূচনালগ্ন থেকেই নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আসছে। সমস্যা সমাধানের জন্য ২৫০ শয্যা ভবন পুরোটা তাদের প্রয়োজন। তিন দফা দাবির অন্য দুটি দাবি হলো- ইন্টার্নদের হোস্টেলের ব্যবস্থা করা ও নিরাপত্তার জন্য আনসার নিয়োজিত করা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাওয়া অনুযায়ী নতুন ভবন থেকে ক্যাম্পাস স্থানান্তরের পক্ষেই মেডিকেল কলেজ; তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও পদক্ষেপের অভাবে সেটি সম্ভব হচ্ছে না বলে অধ্যক্ষ ডা. সুনির্মল রায় দাবি করছেন।
তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে সরকারি কোন ভবন ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলেছিল, সেটি না পাওয়ায় বেসরকারি ভবন ভাড়া নেওয়ার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু বেসরকারি পুরো একটা ভবন না পাওয়ায় স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে হবিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমপেস্নক্স ভাড়া নিয়ে ক্যাম্পাস স্থানান্তরের সম্ভাবনা দেখা দিলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আগ্রহ না থাকায় সেটি হয়নি বলে কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ সুনির্মল রায় বলেন, ভবনটি নেওয়ার জন্য দরপত্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বিধায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এতে সম্মত হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসক যায়যায়দিনকে বলেন, 'আড়াই শয্যা হাসপাতালে জেলায় ২৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা হয়। এজন্য নতুন ভবনও হয়েছিল। কিন্তু মেডিকেল কলেজ স্থানান্তর না করায় চিকিৎসাসেবা বিঘ্ন হচ্ছে। ক্যাম্পাস স্থানান্তর করলে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ- উভয় প্রতিষ্ঠানের সমস্যা দূর হবে। অবিলম্বে এ বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।