এলজিইডির ২০ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কারণে সারাদেশে মাঠপর্যায়ে কর্মরত প্রায় ২৪০০ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলীরা পদোন্নতি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডির) এই ২০ জন বিগত ১৫-১৬ বছর ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্ঠপোষকতায় এলজিইডির সদর দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন। সেখান থেকেই তারা সবধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। ওই ২০ জন ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ নিয়ে এলজিইডিতে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন।
এই চাকরির শর্তমতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তাদের সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা। এছাড়া কোনো প্রকার উচ্চতর ডিগ্রির প্রেক্ষিতে পদোন্নতি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনটিই এলজিইডির চাকরির বিধানে উলেস্নখ আছে। কিন্তু ওই ২০ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সদর দপ্তরে চাকরির সুবাদে দাপ্তরিক নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন। সেই সার্টিফিকেট দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে তৎকালীন রাজনৈতিক তৎপরতায় আদালতের একটি মনগড়া রায়কে পুঁজি করেন এবং সরকারি বিধিমালার তোয়াক্কা না করে জ্যেষ্ঠতার নিম্নধাপ থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদায়নের জন্য এলজিইডির প্রশাসনের সব কমকর্তা ও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। সেই কারণে সরকারি বিধিমোতাবেক জ্যেষ্ঠতার ক্রম ভিত্তিতে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য প্রায় ২৪০০ উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদোন্নতি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
মাঠপর্যায়ে কর্মরত জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলীরা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কর্মরত থেকে দেশের উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করছেন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কর্মরত থাকায় অনেক জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির সুযোগ পান না। বর্তমানে জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলীর শূন্য পদের বিপরীতে ১৫০-২০০ জনের চাকরিকাল প্রায় শেষপর্যায়ে। এই ১৫০-২০০ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদানের জন্য এলজিইডি প্রশাসনের বৈষম্যবিরোধী কমিটি ও প্রধান প্রকৌশলীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলা এলজিইডিতে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম যায়যায়দিনকে জানান, এই ২০ জন জ্যেষ্ঠতার তালিকার নিম্নধাপ থেকে পদোন্নতি পেলে এলজিইডির জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির ধারাবাহিকতা ভেঙে পড়বে।
অন্য আরেকজন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেজবাহুর রহমান বলেন, ওই ২০ জনের পদোন্নতি দেওয়া হলে দেশ উন্নয়নের মূল কর্ণধর মাঠপর্যায়ে কর্মরত ডিপেস্নামা প্রকৌশলীদের পদোন্নতির রাস্তা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে এবং এলজিইডির তথা দেশের উন্নয়নমূলক কাজ স্থবির হয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, কোনো সরকারি চাকরিতে যোগদানের পর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পরও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ছাড়া পদোন্নতি প্রাপ্তির কোনো সুযোগ নেই এবং দেশের সব প্রকৌশল অধিদপ্তরে ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ ও ডিপেস্নামা প্রকৌশলীদের পদোন্নতির যে সরকারি আইন বিদ্যমান রয়েছে সেটি ওই ২০ জনের জ্যেষ্ঠতা ছাড়া পদোন্নতি দিলে চাকরি বিধির পরিপন্থি হবে।
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আলী আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, এলজিইডির অনুমোদিত জ্যেষ্ঠতার তালিকার ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের আগে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এর বাইরে অন্য কোনো সুযোগ নেই।
প্রধান প্রকৌশলীর কাছে ওই ২০ জনের আদালতের রায়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তাকে জানানো হয়েছে। তবে এদের ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।