পূর্বধলায় আউশ ধানের ভালো ফলনে খুশি কৃষকরা

প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
শ্যামনগরে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ হাজার হেক্টর
নেত্রকোনার পূর্বধলায় এবার আউশ ধানের ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। এদিকে, সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আমন আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় চাষিরা। এবার সেখানে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার পূর্বধলায় এ বছর আউশ ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। বোরো ও আমনের মাঝখানে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে এই আউশ ধান মাড়াই করতে পেরে কৃষকদের মাঝে খুশির আমেজ বিরাজ করছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ও তত্ত্ব্বাবধানে এমন ফসল ফলাতে পারছেন বলে জানিয়েছেন আউশ ধান আবাদকারী কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ১৭০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উপজেলায় ২০৭ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ করা হয়। হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদন হয় ৩.১ মে. টন। উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কৃষকদের পাকা আউশ ধান কাটতে দেখা দেখা গেছে। এ সময় উপজেলা সদর ইউনিয়নের বামনডহর গ্রামের কৃষক শামছুদ্দিন উসমান খান, মোতালেব খান, সুমন খান জানান, তারা এখানে ২৫ হেক্টর জমিতে গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় আউশ আবাদ করেন। উদ্বুব্ধকরণের জন্য তাদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার ও অনান্য উপকরণ সরবরাহ করা হয়। নিবিড় পরিচর্যা ও কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক তত্ত্ব্‌াবধানে ধানের ফলনও খুব ভালো হয়েছে। এখানে প্রতি এক কাঠা জমিতে (৮ শতক) প্রায় ৪-৫ মণ ধানের ফলন হয়েছে। বাজারে বর্তমানে এই ফসলের শুকনা একমন ধান তারা ১২০০-১৩০০ টাকা বিক্রি করতে পারছেন। আউশ ধানের এমন ফলনে তারা খুবই খুশি। বোরো কাটার পরপরই রোপিত আউশ ধান কেটে আবার আমন ধান রোপণ করতে পারছেন। ফলে একই জমিতে বছরে তিনটি ফসল বোরো, আউশ ও আমন রোপণ করতে পারবেন। উপজেলা সদর ইউনিয়নের বামনডহর গ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে আউশ শস্য কর্তনের সময় উপস্থিত ছিলেন- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক, আবু মো. এনায়েতুলস্নাহ, উপ-পরিচালক সালমা আক্তার, উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আলমগীর কবীরসহ অন্য কৃষি কর্মকর্তা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর কবীর বলেন, নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের আউশ ধান রোপণ করায় এ বছর আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানে বিঘাপ্রতি প্রায় ২০ মণ ধানের ফলন হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কৃষকদের প্রণোদনা প্রদান ও উদ্বুব্ধকরণের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হয়। ক্লাস্টারের মাধ্যমে ফসল রোপণ করায় পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম ছিল। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। আগামীতে আরও বেশি করে আউশ আবাদের পরিকল্পনা রয়েছে। শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় আমন আবাদ পিছিয়ে যায়। বর্তমানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হওয়ায় আমন আবাদে ধানের পাতার সংকট পড়ায় আবার কিছুটা থেমে যায়। উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, ভূরুলিয়া, কাশিমাড়ী, কৈখালী, ঈশ্বরীপুর, নুরনগর, শ্যামনগর, আটুলিয়াসহ অন্যান্য ইউনিয়নে আমন ধান আবাদ হয়ে থাকে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে প্রকাশ, উপজেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার ৮২০ হেক্টর। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ হাজার ২৬৬ মেট্রিক টন। এর মধ্যে উফসি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার ১২৫ হেক্টর। চালের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার ৭৮৪ মেট্রিক টন। হাইব্রিড আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬৫০ হেক্টর। চাল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন। স্থানীয় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হেক্টর। চালের লক্ষ্যমাত্রা ৭৭ মেট্রিক টন। উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউপির ধানখালী গ্রামের আমন চাষি খোকন বৈদ্য বলেন, আমন ধান রোপণ শেষ পর্যায়ে। শেষ মুহূর্তে বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে ধানের বীজ বপন করতে না পারায় ধানের পাতার সংকট পড়ে যায়। আমনচাষি নকিপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, বারসিকের কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ জোয়ারদ্দার বলেন, স্থানীয় জাতের ধান চিনিকিনি, নারকেল মুছিসহ অন্যান্য জাতের ধান বিলুপ্তির পথে। কৃষকরা বলেন, হাইব্রিড ধান চাষ বেশি লক্ষ্য করা যায়। উপজেলায় কৃষকের প্রধান ফসল আমন আবাদ। আমন চাষকে ঘিরে কৃষকরা নতুন নতুন স্বপ্ন দেখে থাকেন। উপজেলায় আমন আবাদের পাশাপাশি বোরো ও আউশ ধান আবাদ হয়ে থাকে। কৃষকদের তথ্য মতে ও উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শ্যামনগরে লবণ পানিতে চিংড়ি চাষের প্রাধান্য থাকলেও বোরো ধান, আমান ধানের আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর কৃষি অফিসের আয়োজনে ২ হাজার ৯০০ জন কৃষকদের মধ্যে প্রণোদনা দেওয়া হয় ধান বীজ ও সার। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৩০০ জন কৃষককে প্রনোদনা দেওয়া হয়। উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা বলেন, প্রণোদনায় বিতরণকৃত ধান এই এলাকার উপযোগী জাত। তাদের জীবনকাল ১২৫ দিন।