মনের মাধুরী দিয়ে শুকনা কাঠের ওপর খোদাই করে ফুল ফোটান নকশা শিল্পীরা। এই ফুল ফোটানোর মধ্য দিয়েই চলে তাদের জীবন-জীবিকা।
কথা হয় এমনই এক নকশা শিল্পীর সঙ্গে। ২০০৩ সাল থেকে কাঠের ওপর বিভিন্ন নকশা এবং ফুল ফোটানোর কাজ করে আসছেন তিনি। তখন তার বয়স ১৫ বছর। সেই সময় হাতেখড়ি হলেও তিনি এখন একজন পরিপূর্ণ মিস্ত্রি। বলছিলাম, নকশা মিস্ত্রি মো. মিরাজ মোল্যার কথা। মিরাজ মোল্যা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের মরিচ পাশা গ্রামের মৃত খোরশেদ মোল্যার ছেলে মিরাজ এখন প্রতিষ্ঠিত একজন নকশা কারিগর ও ফার্নিচার ব্যবসায়ী।
মিরাজ জানান, তার কাছ থেকে কাজ শিখেছেন অনেকেই। আগে অন্যের দোকানে কাজ করতেন। এখন নিজেই উপজেলার মরিচ পাশা হাসপাতাল মোড় (মরণ মোড়) বাজারে একটি দোকান দিয়েছেন। অভাবের কারণে খুব অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয়। তাই ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ে আর পড়তে পারেননি। তবে পড়ালেখা না করলেও কাজে মনোযোগ ও প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকায় তিনি আজ সফল।
তিনি জানান, সহিদুল ইসলাম নামে তার এক আত্মীয় শিখিয়েছেন এই কাজ। তিনি ও তার ওই আত্মীয় মিলে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। ২১ বছর ধরে এ কাজ করছেন।
উপজেলার লোহাগড়া, দিঘলিয়া, নলদী, লাহুড়িয়া, এড়েন্দা, ইতনাসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন নতুন ফার্নিচারের দোকান গড়ে উঠেছে। আর এতেই অনেকেরই কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। কাঠের ওপর নকশা করে চলছে এদের সংসার। পস্নাস্টিকের পণ্য বাজার দখলে থাকলেও কাঠের ফার্নিচারের চাহিদা কমেনি। তাই অনেকেই নকশা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। উপজেলার লোহাগড়া বাজারের ফার্নিচার ও কাঠ ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে অটোবিসহ অত্যাধুনিক বিভিন্ন কোম্পানির আসবাবপত্র বের হলেও একটুও চাহিদা কমেনি নকশাওয়ালা কাঠের ফার্নিচারের। মানুষ যত আধুনিক হচ্ছে, ততই কদর বাড়ছে কাঠের ফার্নিচারের।
নকশা কারিগর হাসু শেখ জানান, নকশা একটি হস্তশিল্প। তাই নকশার কাজের কদর রয়েছে সারাদেশে। তবে চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে বাড়ছে না নকশা কারিগর। বর্তমানে বিভিন্ন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হওয়াতে অনেকে এই কাজের দিকে বেশি ঝুঁকছেন না।
যদি মনোযোগ দিয়ে কাজ করে নকশার কাজ ভালোভাবে শিখতে একজন কারিগরের ৫-৬ বছর সময় লাগে।