গ্রামীণ জনপথ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বটবৃক্ষ

প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

এসএ প্রিন্স, নীলফামারী
'বটবৃক্ষের ছায়া যেমন রে, মোর বন্ধুর মায়া তেমন রে' গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় এই লোক সঙ্গীত যেন আজও মনে করিয়ে দেয় গ্রামীণ ঐতিহ্য বটবৃক্ষের কথা। একটা সময় ছিল যখন বাড়ির সামনে, জমির ধারে ও বিভিন্ন জায়গায় বটগাছ দেখা যেত। অনেক ক্ষেত্রে ঠিকানা নির্ধারণের জন্য 'বটতলা' বলে অভিহিত করা হতো বিভিন্ন স্থানকে। সে রকমই একটি স্থান নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার খারিজা গোলনা বটতলা। যার পুরাতন স্মৃতি এখনো বিদ্যমান রয়েছে। তবে বর্তমানে নীলফামারীর গ্রামীণ জনপথ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এসব বটবৃক্ষ। গ্রাম বাংলায় পথের ধারে, নদীর পাড়ে, হাটে অথবা জনবিরল স্থানে ডাল-পাতায় ভরা বটগাছ পথিকের বিশ্রামের জায়গা। যা মানুষ, পাখি ও কীটপতঙ্গের অকৃত্রিম বন্ধু। গ্রাম-গঞ্জের মেলাও বসত বটবৃক্ষের নিচে। সময়ের বিবর্তনে বটগাছের ঐতিহ্য অনেকটা হারিয়ে গেলেও নীলফামারীর গ্রামীণ জনপদে এখনো টিকে আছে অনেক শতবর্ষী বটগাছ, যা নিয়ে রয়েছে কত শত কল্পকাহিনী। বর্তমানে প্রাচীন আমলের দুই-একটি বটগাছ চোখে পড়লেও অনেকাংশে মানুষের চলাফেরার সুবিধার্থে এগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। বটগাছের ফল কোনো কাজে না আসলেও এর ঠান্ডা ছায়া অতি লোভনীয়। ক্লান্তি দূর করতে বটগাছের ছায়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জীবন-জীবিকার তাগিদে ছুটতে গিয়ে অনেক সময় মানুষ ভুলে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য। প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো সংরক্ষণ করার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, একটি বটগাছ কাটার সঙ্গে সঙ্গে তিন শতাধিক প্রজাতির আবাস নষ্ট হয়। তাই আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে পরিবেশবান্ধব বটগাছ সংরক্ষণ ও রোপণ করতে হবে। বট গাছের ফল কাক, শালিক ও বাঁদুড়ের প্রিয়। বটগাছ বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম। ভূমি ক্ষয় রোধ করতে বটগাছের জুড়ি নেই। সালোক সংশ্লেষণের সময় অন্য গাছের চেয়ে বাতাস থেকে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয়। গাছের শিকড় অনেকটা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশের মাটি আঁকড়ে রাখে। নীলফামারী সরকারী মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম বলেন, বটগাছ বাংলা সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সংস্পর্শে মিশে আছে। আজ থেকে প্রায় ২০-২৫ বছর আগে জেলার গ্রামীণ জনপথে চোখে পড়তো বটবৃক্ষসহ পাইকড়, বনস্পতি, মহীরুহ অর্জুনসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গাছ রোপণ করা হলেও বটগাছ রোপণের তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না।