ভারতীয় ঠিকাদার চলে যাওয়ায় বন্ধ ফোরলেন প্রকল্পের কাজ

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

বাহারুল ইসলাম মোলস্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
আশুগঞ্জ-আখাউড়া নির্মাণাধীন ফোরলেন প্রকল্পের ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৈরতলা অংশ -যাযাদি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-আখাউড়া নির্মাণাধীন মহাসড়কের ফোরলেন প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর প্রকল্পের নির্মাণকাজ ফেলে চলে যান প্রকল্পে কর্মরত ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা। এতে করে বন্ধ হয়ে গেছে ফোরলেন প্রকল্পের কাজ। এ অবস্থায় খানাখন্দে ভরপুর চট্টগ্রাম-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে যানবাহন চলাচলে বেড়েছে ভোগান্তি। বর্তমানে তা চরম আকার ধারণ করেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পের কাজ আবার কবে নাগাদ শুরু হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হওয়ার পর ভারতীয় নমনীয় ঋণ এলওসির অধীনে ২০১৮ সালে তিনটি প্যাকেজে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত দুইলেন থেকে মহাসড়কটি চারলেনে উন্নয়ন কাজ শুরু করে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। কাজ শুরুর পর গত ২০১৯ এবং ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পটির কাজ অনেকটাই থমকে যায়। পরবর্তীতে বালু সংকটের কারণে আরও ৬ মাস বিলম্ব হয় নির্মাণ কাজের। এরই মধ্যে গত ২০২২ সালে প্রকল্পটির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছিল। এর মধ্যে প্যাকেজ-১-এর অধীনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জের গোল চত্বর থেকে বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত একপাশের দুই লেনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। প্যাকেজ-২-এর অধীনে বিশ্বরোড থেকে ধরখার পর্যন্ত এক পাশের কাজ অনেকাংশেই শেষ হয়েছে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর বাইপাস, ঘাটুরা বিরাসার, পৈরতলা, রাধিকা ও উজানিসার এলাকায় মহাসড়কের একপাশে খানাখন্দ থাকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। সড়কটি দিয়ে চলাচলরত যানবাহন, চালক এবং যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বটতলী গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন জানান, আখাউড়া-আশুগঞ্জ সড়কটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের কাজ বন্ধ থাকায় যানবাহনের চালক, যাত্রী এবং স্থানীয়রা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। খানাখন্দ সড়কের কারণে প্রতিদিনই ঘাটুরা, বিরাসার, পৈরতলা, পুনিয়াউট, রাধিকা এলাকায় যানজট লেগে থাকে। এতে করে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে সড়কের তীব্র ধুলার কারণে আশপাশের বাসাবাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা সংকট। তিনি দ্রম্নত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান। পরিবহণ চালক আলমগীর মিয়া বলেন, নির্মাণাধীন সড়কটি দিয়ে যানবাহন চালাতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকার পাশাপাশি যানবাহনের নাট-বল্টু, চাকা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। তিনি সড়কটির কাজ দ্রম্নত শেষ করার দাবি জানান। আখাউড়া-আশুগঞ্জ ফোরলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ জানান, আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত চারলেন প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছিল। তিনটি প্যাকেজেই ঠিকাদার ছিল ভারতের এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয়রা তাদের হাইকমিশনে নিরাপত্তার কথা বলে সবাই দেশে চলে গেছে। কবে ফিরে আসবে এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি তারা। শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পর থেকে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। কবে চালু হবে তা এখন বলতে পারছেন না। চলমান দুইটি প্যাকেজের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশ' ভারতীয় লোক কাজ করতেন। তাদের একজনও বাংলাদেশে নেই। তিনি আরও জানান, 'আমাদের প্যাকেজ-১ এর আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত মহাসড়কের ৬২ শতাংশ এবং বিশ্বরোড থেকে ধরখার বাজার পর্যন্ত ৫২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ যেহেতু ভারতীয় ঠিকাদারের অধীনে ছিল, তাই রাস্তার বর্তমানে মেরামতের দায়িত্বও তাদের ছিল। যেহেতু তারা নেই, তাই রাস্তা মেরামত করার মতো জনবল বা যন্ত্রপাতি আমাদের হাতে নেই। আমরা রাজস্ব খাত থেকে টাকা দিয়ে মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রম্নতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে উপর থেকে।' উলেস্নখ্য, আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার ফোরলেন প্রকল্পটিতে একটি উড়াল সেতুসহ ১৬টি ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে। প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা।