চোরাচালান ও মাদকের অভয়ারণ্য এখন মধ্যনগর সীমান্ত
প্রকাশ | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর সীমান্তে চোরাচালান ও মদক থামানো যাচ্ছে না। সীমান্ত এখন চোরাচালানের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আগের চেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতি রাতে চোরাকারবারিরা সীমান্তের কাঁটাতার অতিক্রম করে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু, মহিষ, চিনি, বিভিন্ন মাদকদ্রব্য, কসমেটিকস, শাড়ি কাপড়, কাঁচা সুপারি, চা পাতাসহ বিভিন্ন পণ্য দেদারসে আমদানি করছে। অন্যদিকে এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সুপারি, ছোলাবুট, শুকনো সুপারি, পটের দুধ, মটরশুটি ইত্যাদি পণ্য ভারতে পাচার হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রটি বিজিবি ও মধ্যনগর থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার ভারতের সীমান্তবর্তী উত্তর বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের আন্তরপুর গ্রাম, মহেষখলা, কাইটাকোনা, কড়ইবাড়ী, গুলগাঁও, রূপনগর ও কান্দাপাড়া, বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া গ্রামের কয়েকটি সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার মহেষখলা, কাইটাকোনা, কড়ইবাড়ী (কড়ই চড়া), আমতলা, ঘিলাগড়া, বাঙ্গালভিটা সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার এসব ভারতীয় পণ্য ঢুকছে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশি পণ্য পাচার হচ্ছে ভারতে। এসব চোরাকারবার রাতে ও দিনেও চলছে প্রতিনিয়ত। এক কথায় চোরাকারবারিদের স্বর্গরাজ্য এখন মধ্যনগর সীমান্ত। আর এক অদৃশ্য কারণে নীরব রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
প্রতি রাতেই কোটি কোটি টাকার গরু ও মহিষ চোরাই পথে ভারত থেকে আসছে। এসব গরু ও মহিষ রাতে এমনকি দিনের বেলায় প্রকাশ্যে পাচার করা হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর উপজেলার মহিষখলা হতে নৌকাযোগে চোরাচালানের হাজার হাজার গরু, মহিষ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হয়। এতে করে সন্ধ্যার পর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন ও জনচলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মধ্যনগর থানার ওসি এমরান হোসেনের নিয়োজিত ল্যাইনম্যান দাতিয়াপাড়া গ্রামের উজ্জ্বল মিয়া ওসির নামে চোরাকারবারিদের থেকে ভারতীয় গরুপ্রতি ৪০০ টাকা ও মহিষ প্রতি ৭০০ টাকা করে বখরা আদায় করেন। চোরাইপথে আনা চিনির প্রতি বস্তা ১০০ টাকা আদায় করা হয়। সুপারির বস্তা প্রতি ১০০ করে টাকা বখরা আদায় করে থাকে।
ল্যাইনম্যান উজ্জ্বল মিয়া প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার বখরা আদায়ের টাকা উত্তোলন করে প্রতি বুধবার এএসআই কিমত আলী মির ও এসআই পান্না লাল দে'র মাধ্যমে ওসি এমরান হোসেনকে দিয়ে আসেন।
উলেস্নখ্য, ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর এবং ২০২৪ সালের ৫ মে দৈনিক যায়যায়দিনসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নামে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গস্খহণ করা হয়নি। সীমান্ত এলাকায় এখন আগের চেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। এ ব্যাপারে মধ্যনগর থানার ওসি মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, 'এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আমি আগামী ৩ তারিখ কথা বলব।'
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এমএন মোর্শেদ বলেন, এ ব্যাপারে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চোরাচালানের সঙ্গে যদি কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকে, তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।