খুলনায় সংস্কারের অভাবে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এদিকে, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে গত ছয় মাস ধরে নির্মাণাধীন রাস্তার কাজ বন্ধ থাকায় এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধির পাঠানো বিস্তারিত খবর-
খুলনা অফিস জানায়, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে জিরোপয়েন্ট থেকে আঠারো মাইলের সুভাসিনী বাজার পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থান বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে উঠেছে নানা অভিযোগ। মাত্র সাড়ে ৪ বছর আগে ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণ হয়। মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের কাজ করে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর সাতক্ষীরা-খুলনা সড়কে যানবাহন চলাচল বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের বিটুমিন উঠে অনেক স্থানে খানা-খন্দে পরিণত হয়েছে। সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। গত বৃহস্পতিবারও বিআরটিসি বাসসহ একাধিক পরিবহণ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে ৬ কি. মি. সড়কে কাজের জন্য টেন্ডার হয়েছে। তা ছাড়া জিরোপয়েন্ট থেকে কিছু অংশে ঢালাই কাজের জন্যও টেন্ডার হয়েছে।
খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন বলেন, সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন অতিভারী যানবাহন চলার কারণে কিছু কিছু অংশে বৃষ্টিতে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে শিগগিরই সংস্কারের জন্য ব্যবস্থা চলছে।
সওজ বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমানে খুলনা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুজ্জামান মাসুদ বলেন, '২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর খুলনা-চুকনগর সাতক্ষীরা সড়কে যানবাহনের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। তা ছাড়া সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের ভারী যানবাহন চলাচলও বেড়ে গেছে। এসব কারণে সড়কের তিনটি স্থান জিরোপয়েন্ট থেকে নিজখামার, গুটুদিয়া এবং চুকনগর এলাকা মিলে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি বছর ১৯ মে ৩০ কোটি টাকার একটি টেন্ডার হয়েছে। এর মাধ্যমে দুইটি বাঁক সরলীকরণসহ শক্ত ঢালাইয়ের কাজ করা হবে। ফলে কাজটি শেষ হলে যান চলাচলে আর ভোগান্তি থাকবে না।
হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বালস্না ইউনিয়নের ঝিটকা উজানপাড়া থেকে ভাদিয়াখোলা বাজার পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার নির্মাণাধীন পাকা রাস্তার কাজ প্রায় ছয় মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে চরম জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তায় পানি জমে যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে মানুষ চলাচল করতে পারছে না। এতে করে দূরদূরান্তের পথচারীসহ স্থানীয় প্রায় ৭-৮ গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে।
জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে এই রাস্তার পিচঢালাই করে পাকাকরণের কাজটি শুরু করে শেখ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। দেড় বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে এক বছরে কাজ শেষ হয়েছে অর্ধেকের মতো। শুরুতে টানা তিন চার মাস কাজ করে পুরো রাস্তায় বক্স তৈরি করে বালি ফেলে ভরাট করা হয়। এরপর বালির সঙ্গে যতসামান্য কিছু খোয়া মিশিয়ে যাতায়াতের উপযোগী করলেও প্রায় ছয় মাসের অধিক সময় ধরে বাকি কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্মাণাধীন রাস্তা দিয়ে নিয়মিত ভারী যানবাহন চলাচলে গাড়ির চাকায়, রাস্তার দুই পাশ দেবে গেছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে পুরো রাস্তা অনেকটাই খালের মতো হয়ে পরেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, টানা বৃষ্টির কারণে পুরো রাস্তা জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। কোথাও হাঁটু পানি। রাস্তার অনেক জায়গা ভেঙে চলে যাচ্ছে খোয়া। রাস্তায় পানি জমে থাকায় কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল আনা নেওয়া করা যাচ্ছে না।
শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের নসিমন চালক সোহেল রানা জানান, 'আজ ছয় মাস ধরে রাস্তার এমন অবস্থা। একটু বৃষ্টি নামলেই সারা রাস্তায় পানি জমে যায়। এতে আমরা গাড়িতে মালামাল বহন করতে পারছি না। রাস্তার কাজটা দ্রম্নত শেষ করা না হওয়ায় আমরা খুব ভোগান্তিতে আছি।'
খেরুপাড়া গ্রামের তালিব হোসেন জানান, এক বছর আগে রাস্তাটির কাজ শুরু হয়। টানা তিন চার মাস কাজ চলে। আধা-নির্মিত রাস্তা দিয়ে ছোট বড় যানবাহন চলাচলে রাস্তার দুইপাশ নিচু হয়ে গেছে। এতে বৃষ্টি নামলেই মনে হয় এখনেই জলাবদ্ধতায় বন্যা হয়ে গেছে। এলজিইডিরও কোনো কর্মকর্তা কখনও এসে দেখল না রাস্তাটা কি অবস্থায় আছে।'
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে জিডিবি-৩ প্রকল্পের আওতায় এক কোটি সাত লাখ ৫৮ হাজার ৫৫৬ টাকায় শেখ এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রাস্তাটির পাকাকরণের কাজ শুরু করে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রাসেল জানান, 'দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় আমরা কাজটি করতে পারিনি। তবে শিগগিরই কাজ সম্পন্ন করা হবে।'
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মাজহারুল হক আকন্দ জানান, 'আমরা কাজ শুরু করার জন্য ঠিকদার প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার তাগাদা দিয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে আবার রি-টেন্ডার দেওয়ার ব্যবস্থা করব।'