আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ইলিশের বাজার দর নিয়ন্ত্রণের প্রত্যাশা ছিল ভোক্তাদের। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে এখনো চলছে আগের দামে। এতে ফরিদপুরের ভোক্তরা ভরা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত মূল্যে পাচ্ছে না ইলিশ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণায় ইলিশ পাচারকারী চক্র ভয়ভীতিতে থাকলেও বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তা সাধারণ।
ফরিদপুর শহরের হাজি শরীয়াতুলস্না মাছের বাজারে গিয়ে দেখা মেলে অধিকাংশ খুচরা মাস ব্যবসায়ীর কাছে রয়েছে ছোট বড় নানা রকমের ইলিশ। তবে দর পূর্বের ন্যায় চড়া। আর এতে ক্ষোভ দেখা যায় ইলিশ ক্রেতাদের মধ্যে।
বর্তমান সরকারের হুঁশিয়ারিতে ভারতে ইলিশ পাচার কমে আসলেও এখনো ফরিদপুরে বাজারগুলোতে এর প্রভাব পড়েনি। জেলার অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রক সিন্ডিকেট এখনো ইলিশের চড়া মূল্য ধরে রেখেছে। কৃত্রিম উপায়ে মজুতের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। এতে এখনো কাঙ্ক্ষিত মূল্যে ইলিশ পাচ্ছে না ভোক্তারা।
ফরিদপুরের বাজারে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা রেজাউল করিম, রোকেয়া বেগম ও সাইদা আক্তার ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, 'শুনেছি ইন্ডিয়ায় ইলিশ যাচ্ছে না। তবে কেনো ইলিশের মৌসুমে এত দর হবে। বাজারে এসে দেখি, দাম আগের মতই আছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, ইলিশ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যেন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।'
বাজারে মাছ ব্যবসায়ী পরিমল কুমার দাস বলেন, সাগর বা নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে কম, তাই বাজারদরও একটু বেশি। আর এ কারণে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহও তেমন নেই।
হাজি শরীয়াতুলস্না বাজারের রুপালী ফিসের স্বত্বাধিকারি হারান সরকার বলেন, ইলিশের মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন ফরিদপুর সদর উপজেলায় বাজারগুলোতে ১০০-১১০ মণ ইলিশ আনা হয়। তবে মৌসুম ব্যতীত এর হার ৪০-৬০ মণের মধ্যে বা এরও কিছু কম বেশি থাকে।
ইলিশের এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, শুধু ফরিদপুর পৌর এলাকাতেই প্রতিদিন ৬০-৭০ মণ ইলিশের চাহিদা রয়েছে।
বাজারের অতিরিক্ত দাম বেশির কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা যে দরে মাছ কিনি, এতে ফরিদপুর পর্যন্ত আনার খরচ কেজিতে পড়ে যায় ৩০-৪০ টাকা, এরপর আবার প্রতি কেজিতে বাজারের খাজনা দিতে হয় ৫০ টাকার বেশি। স্বাভাবিকভাবেই আমরা যে দরে মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি, এর থেকে একটু বেশি দরে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়। এ ছাড়াও নদী বা সাগরের মাছ ধরার ওপর দর অনেকটা নির্ভর করে।'
শহরের শরীয়াতুলস্নাহ বাজার, টেপাখেলা বাজার ও হেলিপ্যাড মাছ বাজারের গিয়ে দেখা যায়, এই বাজারের বরিশাল, ভোলা বা পটুয়াখালীর ইলিশ এক কেজি সাইজের বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৭০০ টাকায়। আর কেজির ওপরে গেলে এর দর ১৯০০-২২০০ টাকা। তবে চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজারের ইলিশের দর কিছুটা কম। আর কেজিতে ৪-৫টি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকায়। প্রতিটি বাজারেই বিক্রেতারা একই দামে বিক্রি করছে। বাজারগুলোতে সিন্ডিকেটের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্য করা গেছে।