বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার হাজী তাহের আহম্মেদ মহিলা (সাধারণ ও কারিগরি) কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক অরবিন্দ কুমার দাস। তিনি ২০০৪ সালে চাকরিতে নিয়োগ লাভ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি এমপিওভুক্ত শিক্ষক হতে পারেননি। একই কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন মিজানুর রহমান। তিনিও একই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। নিয়োগ পেয়েছেন, পড়াচ্ছেন, কিন্তু বেতন পাচ্ছেন না। এ রকম বাংলা, ইংরেজি, ব্যবস্থাপনার শিক্ষক সারাদেশে কত তার সঠিক হিসেব জানা নেই।
ভুক্তভোগী প্রভাষক অরবিন্দ কুমার দাস জানান, নিয়ম মেনে চাকরিতে নিয়োগ লাভের পর এমপিও'র জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেন। ১৯৯৫ সালের জনবল কাঠামোতে বাংলা, ইংরেজি, ব্যবস্থাপনা পড়ানোর বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল না- অযুহাতে এমপিও আবেদন বাতিল হয়।
অরবিন্দ আরও বলেন, 'আমার সঙ্গে চাকরিতে যোগদান করে কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষকদের বেতন হচ্ছে, কিন্তু আমার হচ্ছে না। এমপিও না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। আশ্বাস পাচ্ছি কিন্তু এ বিষয়টির কোনো সুরাহা হচ্ছে না।'
এই প্রভাষক জানান, গত ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর দেশের বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়। এমপিওভুক্ত ঘোষণার প্রায় ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও এসব শিক্ষকের ভাগ্যে জোটেনি বেতন-ভাতা।
মূলত, যেসব সাধারণ কলেজের সঙ্গে কারিগরি শাখা যুক্ত রয়েছে ওইসব কলেজের কারিগরি শাখার বাংলা, ইংরেজি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক নিয়োগ বিধির জটিলতার কারণে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। কারণ হিসেবে উলেস্নখ করা হয় ১৯৯৫ সালের জনবল কাঠামোর নীতিমালা অনুযায়ী সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানে বাংলা, ইংরেজি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রাপ্যতা ছিল না, বিধায় অনুমোদন যোগ্য নয়।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি আমান উলস্নাহ খান ইউছুফজী বলেন, সংখ্যা বলা মুশকিল তবে প্রায় ৭শ'র বেশি পুরানো কারিগরি শিক্ষক বেতন পাচ্ছেন না। আমরা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে বিষয়টি নিয়ে দেন-দরবার করেছি। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও একটু দেরি হচ্ছে-আমরা আশা করছি সরকার নতুন শিক্ষক নেওয়ার আগেই পুরানো এসব শিক্ষকদের এমপিওকরণ জটিলতা নিরসন করবে।
আমান উলস্নাহ খান অন্তর্কোন্দলের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, 'আমাদের কারিগরি শিক্ষকদের ভেতরেই অনেকে এ বিষয়টি চাচ্ছেন না বলে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়েছে- যে কারণে আদালতে মামলাও চলেছে।'
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বিষয়টিতে তাদের নজর রয়েছে। যদিও গতি মন্থর। তবে এজন্য তারা একা দায়ী নয় এবং তারা জানেন না এমন বঞ্চিত শিক্ষকদের সংখ্যা ঠিক কত।
এ বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ও যুগ্মসচিব (পিআইডবিস্নউ) এওয়াইএম জিয়াউদ্দীন আল-মামুন জানান, নন-এমপিও শিক্ষকদের সংখ্যা কোনো মুখ্য বিষয় নয়। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষকদের এমপিও সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকা নীতিমালাটি অনুমোদিত হয়ে আসলে পুরানো শিক্ষকরা এমপিও'র আওতাভুক্ত হবেন।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০৫টি। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কলেজ পর্যায়ে শত শত প্রভাষকের নিয়োগ বিধির জটিলতায় ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এসব প্রভাষক প্রায় ২০ বছর ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করে আজ পর্যন্ত বেতন ভাতাদি না পাওয়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।