শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

কাজিপুরের ছালাভরা এখন 'ফার্নিচার গ্রাম' নামে পরিচিত

কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের ছালাভরা গ্রামে ফার্ণিচার তৈরি করছে কারিগররা - যাযাদি

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী মাইজবাড়ী ইউনিয়নের ছালাভরা গ্রাম। ১৫-১৬ জেলার অনেক মানুষের কাছেই এটি 'ফার্নিচার গ্রাম' হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। গ্রামের বেশির ভাগ কর্মজীবী আসবাবপত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় এই নাম।

প্রায় তিন যুগ ধরে কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করাই এই গ্রামের মানুষের জীবিকার প্রধান অবলম্বন। ছালাভরা গ্রামের শ্রমজীবী শ্রেণির পরিবারগুলোর মোটামুটি ৮০ শতাংশ সদস্যই কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কাজ করেন।

করাতকল থেকে আকারমতো কাঠ কেটে আনা থেকে শুরু করে আসবাব তৈরি করে বাজারজাত করা পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপের কাজে যুক্ত তারা। কেউ কারিগরের চাহিদামতো কাঠ কেটে আনেন, কেউ মূল কাঠামো তৈরি করেন, কেউ বা ব্যস্ত থাকেন বাহারি নকশা তোলা বা রং-বার্নিশ ও পালিশের কাজে।

সরেজমিন গিয়ে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমদিকে সবাই বিচ্ছিন্নভাবে যে যার মতো করে বাড়িতে কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ায় ব্যবসাটি আনুষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। বছর সাতেক ধরে বাড়ির পাশের জমিতে বা কারও কারও বসতভিটায় বা রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় দুইশ'র বেশি আসবাবপত্রের কারখানা। সেখানে তৈরি হয় খাট, চেয়ার-টেবিল, আলমারি, শোকেস, সোফা, ড্রেসিং টেবিলসহ নানা রকমের কাঠের আসবাবপত্র।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এসব আসবাব কিনতে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের অন্তত ১৫-১৬টি জেলার পাইকাররা ছালাভরা গ্রামে আসেন। প্রতিদিন আট থেকে ১০ লাখ টাকার আসবাব বিক্রি হয় এখানে।

এ ছাড়া গ্রামের কিছু ব্যবসায়ী তাদের তৈরি আসবাব নিয়ে রূপসা, নলিন, নাটুয়ারপাড়া, রতনকান্দি, সরিষাবাড়ী, মাদারগঞ্জ ও ভূঞাপুর হাটে বিক্রি করেন। নদীতীরবর্তী হওয়ায় নৌকা বোঝাই দিয়ে ওই সব হাটে পণ্য নিয়ে যান তারা।

সম্প্রতি ফার্নিচার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কারখানাগুলোতে শত শত কর্মীকে নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা দামের আসবাব তৈরি করা হয় কারখানাগুলোয়। কাঠের জোগান আসে টাঙ্গাইল, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও ময়মনসিংহ থেকে।

কারখানাগুলোয় অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান। ছালাভরার সাফল্য দেখে আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও আসবাবের কারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। আসবাব তৈরির কাজে নকশা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ছালাভরার আসবাব কারখানায় কারিগররা কিছু নকশা হাতে তৈরি করেন, কিছু কাজ হয় কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে।

কর্মীরা জানান, কম্পিউটারে করা গ্রাফিকস ডিজাইনারের নকশার চাহিদা এখন বেশি। এখানকার কারখানার বেশির ভাগেরই নাম নেই।

একটি কারখানার কাঠমিস্ত্রি আবু বক্কার জানান, 'আগে টাঙ্গাইলে গিয়ে কাজ করতাম। এখন বাড়ির কাছেই কারখানা হয়েছে। এখানে তিন বছর ধরে কাজ করছি।'

কলেজপড়ুয়া সবুজ মিয়া পড়াশোনার ফাঁকে নকশার কাজ করেন। সবুজ বলেন, 'ওস্তাদের নির্দেশনায় কম্পিউটারের সহায়তায় ডিজাইনের কাজ করি। এতে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়।' গ্রামের প্রথমদিকের কারখানাগুলোর একটি 'শরিফ ফার্নিচার'।

মালিক শরিফুল ইসলাম ২০ বছর আগে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে এই কাজ শুরু করেছিলেন। এখন তার অধীনে ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করেন। শরিফুল বলেন, এলাকার কিছু শিক্ষিত বেকার স্থানীয় কারখানাগুলো থেকে বাকিতে পণ্য নিয়ে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করছেন। এতে দুই পক্ষই উপকৃত হচ্ছে।

'হারুন কাঠ ফার্নিচার'-এর মালিক হারুন বলেন, 'আমাদের মূলধন কম। সরকার যদি লোনের ব্যবস্থা করে, তো ব্যবসা বড় করতে পারতাম।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব বলেন, 'এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন কারখানার সম্প্রসারণে ক্ষুদ্রঋণ পেয়েছেন। কাজিপুরে কর্মসংস্থান ও পলস্নী সঞ্চয় ব্যাংকের শাখা রয়েছে। সেখান থেকেও ঋণ পাওয়া যাবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে