বরগুনার আমতলীতে নির্মাণাধীন পাওয়ার গ্রিডের উপ-কেন্দ্রের শ্রমিক সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ছয়জনকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুইপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে বুধবার রাতে।
জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চলাভাঙ্গা এলাকায় ২০২২ সালে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের উপ-কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শুরুতে ওই কেন্দ্রের শ্রমিক সরবরাহসহ অন্য কাজের নিয়ন্ত্রণ ছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন মৃধা এবং তার ভাই জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধার হাতে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তারা গা-ঢাকা দিলে ওই প্রকল্পের শ্রমিক সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ নেন স্থানীয় মিলন মৃধা ও হুমায়ুন কবির মিল্টন মৃধা। তারা আমতলী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিন ফকিরের অনুসারী। শ্রমিক সরবরাহের ওই নিয়ন্ত্রণে ভাগ বসাতে চান একই এলাকার আমিনুল ইসলাম আকন। আমিনুল ইসলাম উপজেলা বিএনপির সদস্য-সচিব তুহিন মৃধার অনুসারী। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দেন দরবার চলছিল। গত বুধবার এ নিয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য-সচিব তুহিন মৃধা সমঝোতা করতে খুড়িয়ার খেয়াঘাট যান এমন দাবি আমিনুল ইসলাম আকনের। সমঝোতাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায় উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে হলদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, হুমায়ুন কবির মিল্টন মৃধা, মিলন মৃধা ও সাংবাদিক এইচএম রাসেল আহত হন। এর জেরে ওই দিন সন্ধ্যায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিন ফকিরের ছেলে রাহাত ফকির ও তার অনুসারী শতাধিক বিএনপির নেতাকর্মী তুহিনের বড় ভাই আব্দুল হালিম মৃধার দোকান ভাঙচুর করে। এতে বাঁধা দেওয়ায় হালিমকে কুপিয়ে জখম করে। তাকে রক্ষায় স্থানীয় কবির খাঁন ও মিজানুর রহমান তালুকদার এগিয়ে গেলে তাদেরও কুপিয়ে জখম করে। খবর পেয়ে তুহিন তার অনুসারীদের নিয়ে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আবুল কালাম, মুছা মিয়া, মিলন, ইউসুফ মিয়া ও মিরাজ সরদারসহ ১৫ জন আহত হন।
এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। জালাল ফকিরের অনুসারী হুমায়ুন কবির মিল্টন মৃধা বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য-সচিব তুহিন মৃধাকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের নামে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চাঁদাবাজি মামলা করেন। অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির সদস্য-সচিব তুহিন মৃধা বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিন ফকিরকে প্রধান আসামি করে তার ভাইকে হত্যা চেষ্টা ও দোকান লুটের অভিযোগ এনে ২৬ জনের বিরুদ্ধে আমতলী থানায় মামলা করেছেন। আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, 'অভিযোগ পেয়েছি। মামলা প্রক্রিয়াধীন।'
আমতলী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিন ফকির বলেন, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা ও সামসুল হক চৌকিদার তাদের অর্ধশতাধিক অনুসারী নিয়ে খুরিয়ার খেয়াঘাটে পাওয়ার গ্রীডের শ্রমিক মিল্টনের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় তারা তাকে মারধর করেন। তবে তিনি তার ছেলের নেতৃত্বে তুহিন মৃধার ভাইকে কুপিয়ে জখমের কথা অস্বীকার করেছেন।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা চাঁদার কথা অস্বীকার করে বলেন, জালাল ফকিরের ছেলে রাহাত ফকিরের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক অনুসারী আমার ভাইয়ের দোকান ভাংচুর, লুটপাট এবং তাকে কুপিয়ে জখম করেছে। তাকে রক্ষায় কবির খাঁন, মুছা, আবুল কালাম ও মিজানুর রহমান এগিয়ে আসলে তাদেরও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে জালাল ফকিরকে প্রধান আসামি করে ২৬ জনের নামে থানায় মামলা করেছি।