মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলায় করালগ্রাসী মনু নদীর ক্ষত এখন ভেসে উঠছে। ভয়াল স্রোতে বাড়িঘর, ক্ষেতখামার কোনো কিছুই আর অক্ষত রাখেনি। স্মরণকালের ভয়াবহ ভাঙনে ২ উপজেলায় কয়েকশ' পরিবার হয়েছে সর্বস্বহারা। মেরামতের সামর্থ্য না থাকায় কেউবা ভাঙা ঘরে আবার কেউবা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
মনু নদী এখন শান্ত। পানিও কমে পড়ে গেছে নদীর তলানিতে। কিন্তু রেখে গেছে তার দগদগে ক্ষত। বর্তমানে মনু নদীর পানির স্রোত কিংবা পরিস্থিতি দেখলে কেউ কল্পনাও করবে না, মাত্র এক সপ্তাহ আগে এই মনু নদী কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলাকে তার তেজস্বী স্রোতে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময়টুকু পায়নি। সর্বস্বহারা হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হয়েছে বসতভিটা ছেড়ে। আবার এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিজ বসতভিটাকেও অচেনা মনে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে। ঘরবাড়ি সবকিছু আবার নতুন করে নির্মাণ করতে হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য অনেকটা কঠিন। এখন নিম্ন আয়ের এসব মানুষের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ঘরবাড়ি মেরামত করা।
টিলাগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা আরাফাত সালাহউদ্দিন বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা ও উদ্ধার কাজে সক্রিয় ছিলেন। তিনি জানান, পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ জীবন বাঁচানোর জন্য আশ্রয় খুঁজতে শুরু করেন। প্রাণ বাঁচাতে কেউ কোনো কিছু নিয়ে যেতে পারেননি। গোলাভরা ধান, কাপড় চোপড়, কোনো কিছু নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বন্যার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। কিন্তু তখন যারা বাড়িতে ছিলেন তারা খুবই ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, মনু নদীতে এরকম প্রবল স্রোত তারা আগে কখনো দেখেননি। এর আগেও মনু নদীর বাঁধ ভাঙনে বন্যা হয়েছে। তবে এভাবে পানির স্রোত এত প্রবল ছিল না। অতিরিক্ত স্রোতের কারণে বাড়িঘর বেশি বিধ্বস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টিলাগাঁও ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া, বলাকান্দি ও হাজিপুর গ্রাম। এই ২ গ্রামেই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
টিলাগাঁও ইউনিয়নের মিয়ারপাড়ার সুফি মিয়া, সাজাদাপুরের নিজুম মিয়া, হাজীপুরের কনাই মিয়া, পারভেজ মিয়া, বলাকান্দির কদর আলী, নিজুম আলী, আশুক মিয়াসহ অনেকেই জানান, তারা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। বাঁশ-বেত দিয়ে কোনোমতে টিনের চাল তুলে ঝুঁকিপূর্ণ সেই ঘরের নিচে বসবাস করছেন। ঘরবাড়ি মেরামত করার পর্যাপ্ত টাকা-পয়সাও এখন হাতে তাদের হাতে নেই। হঠাৎ আসা এ বিপদ কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সব মানুষই বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরেছেন। তবে বৃষ্টিপাত হলে বাড়িতে বসবাস করাও দুষ্কর হয়ে পড়বে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহি উদ্দিন জানান, বন্যা আক্রান্ত এলাকায় যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দ এলেই তাদের সহযোগিতা করা হবে। এখন ত্রাণের পরিবর্তে মানুষকে গৃহ মেরামতের নগদ অর্থ প্রদানের জন্য দাতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।