মেহেরপুরে গ্রীষ্মকালীন প্রণোদনার পেঁয়াজ ও সাতক্ষীরার আশাশুনিতে অসময়ের তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। দুই জেলার কৃষকরা বর্তমানে পেঁয়াজ ও তরমুজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলনও ভালো পাচ্ছেন তারা। তাই ন্যায্য দাম পেলে লাভবান হবেন বলে তাদের আশা। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, পেঁয়াজের ঘাটতি কমাতে মেহেরপুর জেলায় ৩ হাজার ৪০০ জন কৃষককে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য সরকারিভাবে বিনামূল্যে বীজসহ নানা উপকরণ প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এখন বীজতলায় চারা প্রস্তুত। চলছে রোপণ করার কাজ। এ ছাড়া আরও ১০ হাজার চাষিকে বীজ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। গত বছর এই বীজে পেঁয়াজ আবাদ করে লাভবান হওয়ায় এ বছর প্রচুর আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের।
পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণে প্রথম পর্যায়ে মেহেরপুর জেলায় এবার সরকারিভাবে বিনামূল্যে ৩ হাজার ৪০০ চাষিকে দেওয়া হয়েছে উন্নতমানের গ্রীষ্মকালীন নাসিক এন-৫০ পেঁয়াজের বীজ, যা গতবারের তুলনায় দ্বিগুন। এ ছাড়া এর সঙ্গে দেওয়া হয়েছে ডিএপি সার ২০ কেজি, এমওপি সার ২০ কেজি ও নগদ টাকাসহ নানা উপকরণ। ইতোমধ্যে চাষিরা বীজতলায় চারা তৈরি করে রোপণ করা শুরু করেছেন। প্রতি চাষিকে এক কেজি করে বীজ দেওয়া হয়েছে। এতে এক বিঘা পেঁয়াজ চাষ করা যাবে। গত বছর চাষিরা এই পেঁয়াজ চাষ করে ভালো লাভবান হওয়ায় এবার ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। ফলে আরও ১০ হাজার চাষিকে পেঁয়াজ বীজ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
সদর উপজেলার দীঘিরপাড়া গ্রামের চাষি আজিজুল ইসলাম জানান, সরকারি প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজে গেল বছর বিঘা প্রতি ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। এ বছরও আশা করছেন বাজারদর ঠিক থাকলে গেল বছরের মতো লাভ হবে।
একই গ্রামের আর এক চাষি মোশাররফ হোসেন জানান, এই পেঁয়াজের ফলন খুব ভালো। গত বছর বিঘাপ্রতি ১০০-১২০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া গেছে। তাছাড়া এ সময় পেঁয়াজের দামটাও ভালো পাওয়া যায়। তবে কখনো কখনো এলসির পেঁয়াজ বাজারে এসে দাম কমে যায়। যদি এসময় এলসি বন্ধ থাকে তবে চাষিরা লাভবান হবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার যায়যায়দিনকে জানান, মেহেরপুরের মাটি উঁচু ভূমি হওয়ায় এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় না। তাই সব ধরনের চাষাবাদ এখনো হয়ে থাকে। চাষিরা এখন বীজতলা থেকে পেঁয়াজের চারা তুলে জমিতে রোপণ করছেন। সঠিক রোপণসহ বীজতলা ও জমি প্রস্তুতকরণে মাঠ পর্যায়ে দেখভাল করছেন কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা। এ বছর যে পরিমাণ গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়েছে যদি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না আসে তবে জেলার চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলায় পাঠানো যাবে।
আশাশুনি (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার আশাশুনির অসময়ের তরমুজ চাষ করে কৃষক মেহেদী হাসান সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। স্বল্প খরচ করে স্বল্প সময়ে অফ সিজন তরমুজ চাষে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করায় এলাকার কৃষকরা তরমুজ চাষে ঝুঁকতে শুরু করেছেন।
আশাশুনি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এলাকায় অসময়ে অধিক ফলন সম্ভব ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করে আসছিল। কৃষি বিভাগ এসএসিপি রেইনস প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নে এই প্রথম উচ্চমূল্য ফসল প্রদর্শনী (অফ সিজন তরমুজ) চাষের উদ্যোগ নেয়। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এই তরমুজের ফলন পাওয়া যায়। কৃষি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অনুধাবন করতে পেরে অন্য কৃষকদের মধ্যে কুল্যার কৃষক মেহদী হাসান ৫০ শতক জমিতে এই বস্নাক জায়েন্ট জাতের তরমুজ চাষ করেন। এতে তার খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে তিনি চাষাবাদ করে আশাপ্রদ ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন।
কৃষক মেহদী হাসান জানান, 'কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে অসময়ে তরমুজ উৎপাদন করে লাভবান হওয়ার আশায় বুক বেঁধে কাজ করেছি। মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে তরমুজ তুলতে পেরেছি। প্রথম চালানে আমি ক্ষেত থেকে ১২শ' কেজি তরমুজ ওঠাই। প্রত্যেকটি তরমুজ ৫-৭ কেজি থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়েছে। ৪০ টাকা কেজি দরে ক্ষেত থেকে পাইকারি হিসেবে তরমুজ বিক্রি করে ৪৮ হাজার টাকা পেয়েছি। এতে খরচ উঠে ২৩ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। ক্ষেতে এখনো যে ফল আছে তা বিক্রি করে আরও ৫০-৬০ হাজার টাকা পাব।'
তিনি আরও বলেন, 'কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত খোঁজ খবর নিয়েছেন। তাদের পরামর্র্শে রোগবালাই দমন করে ভালোভাবে চাষ করতে পেরে আমি লাভবান হয়েছি।'
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম এনামুল ইসলাম জানান, 'আমরা পরীক্ষামূলকভাবে এ বছর আশাশুনিতে এসএসিপি রেইনস প্রকল্পের আওতায় প্রথমবারের মতো উচ্চমূল্য ফসল প্রদর্শনী (অফ সিজন তরমুজ) চাষের উদ্যোগ নেই। এ বছর প্রায় ২২ হেক্টর জমিতে অফ সিজন তরমুজ চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। মাঠ থেকে পাইকারি ৪০ টাকা কেজি দরে তরমুজ কিনছেন। প্রথম চাষের কারণে খরচ একটু বেশি হয়ে থাকে। সে তুলনায় কৃষকরা তরমুজ বিক্রি করে যথেষ্ট লাভবান হচ্ছেন। আগামীতে খরচ কমে আসবে। তখন লাভের পরিমাণও বেড়ে যাবে।'