হত্যা, হামলা ও কার্যালয় ভাঙচুরের মামলায় ৬ জেলায় আসামি ১২৬০
প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
হত্যা, হামলা ও কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় ছয় জেলায় ১২৬০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর মামলায় লিটন-বাদশাসহ আসামি ৬৩১, সাতক্ষীরায় জামায়াতকর্মীকে হত্যার অভিযোগে সাবেক এমপি ও সাবেক পুলিশ সুপারসহ ৩২, মেহেরপুরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে পাবলিক প্রসিকিউটরসহ ১৮১, চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় মিছিলে হামলার ঘটনায় বিপস্নব আমিন নদভী, রিজিয়াসহ ২০২, নেত্রকোনার দুর্গাপুরে এমপি, মেয়র, আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৭ এবং টাঙ্গাইরের ১৬৭ জনের নামে মামলা করা হয়। আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
রাজশাহী অফিস জানিয়েছে, রাজশাহীতে বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টির ৬৩১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে।
এছাড়াও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ আসনের সাবেক এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-২ আসনের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মীর ইকবালকেও আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক বজলুর রহমান মন্টু।
বোয়ালিয়া থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ জানান, মামলায় আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টির ২৩১ নেতাকর্মীর নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০০ জনকে। এসআই সোহেল রানাকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার কাশেমপুরে জামায়াতকর্মী শহিদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান ও সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরসহ ৩২ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা হয়েছে। সাতক্ষীরার জৈষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম নয়ন বড়ালের আদালতে মামলাটি করেন শহিদুল ইসলামের ভাই ইমাদুল হক। বিচারক মামলাটিকে এফআইআর হিসেবে নিতে সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, তালা-কলারোয়ার সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান, সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক ওসি এনামুল হক, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৬ ফেরুয়ারি আসামিরা কালো মাইক্রোবাসে এসে শহিদুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে গুলি করে হত্যা করে ক্রসফায়ারের নাটক সাজায়।
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, সহযোগী আসামি ১৮১ অস্ত্রবাজ ও সন্ত্রাসী সংগঠন গঠন করে নীরিহ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা, খুন ও গুমের ভয় দেখিয়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মেহেরপুর জেলা জজ আদালতের বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) পলস্নব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। মঙ্গলবার মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট-১ শারমিন নাহারের আদালতে কামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি এ মামলা করেন। মামলায় পিপির সহযোগী হিসেবে ১৮১ জনের নাম উলেস্নখ করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনার আবেদন করা হয়। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক শারমিন নাহার সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী মারুফ আহমেদ বিজন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে অন্যতম হলেন- সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ভগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবুল বিশ্বাস, বুড়িপোতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহ জামান চৌধুরী, বারাদি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম, কুতুবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী মাস্টার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফুয়ান আহমেদ রুপক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বারিকুল ইসলাম লিজন, যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান হিরণ, ছাত্রলীগ নেতা কুতুব উদ্দিন।
লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপস্নব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া- সাতকানিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী, রিজিয়া রেজাসহ ২০২ জনকে আসামি করে লোহাগাড়া থানায় মামলা হয়েছে। এতে ৩০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। গত সোমবার রাতে লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের পুরাতন থানা এলাকার মফিজুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ মোমেন হোসেন জয় বাদী হয়ে মামলাটি করেন। লোহাগাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ আনন্দ মিছিল করে। আসামিদের প্ররোচনায়, অর্থায়নে ও তাদের নির্দেশে আনন্দ মিছিলে গতিরোধ করে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি চালিয়ে জন সাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সাবেক এমপি, মেয়র, আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুর্গাপুর চৌকিতে পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আবু সিদ্দিক রুক্কু বাদি হয়ে এ মামলা করেন।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের দিন সকালে স্থানীয় শহীদ মিনারে উপজেলা বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যাওয়ার সময় পৌরশহরের কাচারী মোড় এলাকায় মামলায় উলেস্নখিত আসামিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ওই সময় হামলা ও গুলি ছুড়লে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীরা গুরুতর আহত হন।
মামলায় নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সফিক, সাবেক মেয়র আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, যুবলীগ সভাপতি আব্দুল হান্নানসহ ৪৭ জনের নাম উলেস্নখ করে এ মামলা হয়। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের সখীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলার ঘটনায় থানায় মারধরের মামলা করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোর্শেদুল ইসলাম অন্তর বাদী হয়ে সখীপুর থানায় মামলাটি করেন। মামলায় টাঙ্গাইল-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুপম শাহজাহান জয় ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সাঈদ আজাদ, জুলফিকার হায়দার কামাল ও পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু হানিফ আজাদসহ ১৬৭ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।
সখীপুরে থানার ওসি শেখ শাহিনুর রহমান বলেন, মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।