অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি দেশের প্রথম ডাকঘর
প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বড়বাজার পাড়ায় দেশের প্রথম প্রধান ডাকঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ আমলের ১৮৬০ সালে। ভারতের কলকাতার জিপিও জেনারেল পোস্ট অফিস পরে প্রথম চুয়াডাঙ্গায় ডাকঘর নির্মিত হয়। পাতলা ইট আর চুন-সুরকির গাঁথুনিতে ভবনটি তৈরি হয় ১৬৩ বছর আগে। ১৯৮৪ সালে ৬ বিঘা জমির উপর পূর্ণাঙ্গরূপে চুয়াডাঙ্গা প্রধান ডাকঘরের কার্যক্রম চালু হয় ২৪ জন স্টাফ নিয়ে। সরকারি ও বেসরকারি অফিসের চিঠিপত্রসহ অন্য কাজ আগের মতোই চলমান রয়েছে। প্রধান ডাকঘরে চালু রয়েছে সঞ্চয়পত্র, সঞ্চয় ব্যাংক, চিঠি, পার্সেল, অফিসিয়াল চিঠি, মানি অর্ডার, দেশ-বিদেশ থেকে চিঠি আসা-যাওয়ার কাজ।
বর্তমানে জরাজীর্ণ ভবনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চুয়াডাঙ্গা প্রধান এ ডাকঘরের কার্যক্রম। পুরাতন ভবনে ফাটল ধরেছে। ছাদের পোলস্তরা খোসে পড়ছে। ডাকঘরের স্টাফ ও সাধারণ গ্রাহকরা যে কোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।
চুয়াডাঙ্গা প্রধান ডাকঘর কর্তৃপক্ষ সূত্র মতে, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত দেশের সর্বপ্রথম ডাকঘর ভবনটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ না করে সেটা ভেঙে নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ঝালকাঠি জেলার নলছটি উপজেলার মাহফুজ খান লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে চুয়াডাঙ্গার প্রধান ডাকঘর নির্মাণ কাজটি পায়। ডাকঘর নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ওই প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ করার কথা থাকলেও চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় ঠিকাদার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি খুস্তার জামিল কাজটি করছেন। ২০২০ সালের জুলাই মাসে চুয়াডাঙ্গা ডাকঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের দুই মাস পর কাজটি শুরু করেন কাজ কেনা ঠিকাদার খুস্তার জামিল। ২০২১ সালের জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি। কয়েক বার কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও তাতেও সম্ভব হয়নি কাজ শেষ করা। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুনে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। নির্মাণ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় ঠিকাদার খুস্তার জামিল সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের দেওয়া ডিও লেটার ব্যবহার করে ব্যয় বৃদ্ধি করিয়ে নেন। এর আগে ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখেন। পরে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ব্যয় বৃদ্ধি করে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রকল্পের মোট নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এ বরাদ্দের পরও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
এ প্রকল্পের সঙ্গে অন্য জেলার ডাকঘরগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলেও, চুয়াডাঙ্গার ডাকঘর নির্মাণ শেষ হচ্ছে না। নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ডাকবিভাগে কর্মরতদের। তাদের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন কাজ করতে হচ্ছে পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ ভবনে। সাধারণ গ্রাহকরাও ঝুঁকির মধ্য রয়েছেন। ডাকঘরের মধ্যে দাঁড়ানোর অবস্থা নেই। বসার জায়গা তো দূরের কথা। নেই প্রয়োজনীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা। নারী গ্রাহকরা পড়েন বেশি ভোগান্তিতে। গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো সংরক্ষণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। সেবা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এ প্রতিষ্ঠান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। চুয়াডাঙ্গা ডাকঘরে আসা গ্রাহক জেসমিন খাতুন ও মসলেম উদ্দিন জানান, বিল্ডিং অনেক পুরাতন। ভেতরে প্রবেশ করলেই ভয় লাগে। কখন ভেঙে পড়ে মাথার উপর। বসা ও দাঁড়ানোর মতো কোনো জায়গা নেই। ভেতরের পরিবেশ অনেক নোংরা। সম্পূর্ণ পোস্ট অফিস চত্বর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রয়োজনীয় কাজে আসি, কিন্তু পরিবেশ দেখে ভালো লাগে না।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাহফুজ খান লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহফুজ খানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিক বার কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। সে কারণে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয় ঠিকাদার খুস্তার জামিলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারটি বন্ধ থাকায় তার সঙ্গেও কথা বলা যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার রিয়াজুল ইসলাম জানান, অন্য জেলায় পোস্ট অফিস নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখানে এখনও শেষ হয়নি। ভবনের ছাদ যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। নতুন ভবন নির্মাণ কাজ খুবই মন্থর গতিতে চলছে। দ্রম্নত নতুন ভবনে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।