মরে যাচ্ছে মাছ
আড়াইহাজারে হঠাৎ কালচে হাঁড়িধোয়া নদীর পানি
প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
হঠাৎ করেই দুই পাড়ের শিল্প-কারখানার বর্জ্যে কালচে হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বৃহত্তর মেঘনার শাখা নদী হাঁড়িধোয়ার পানি। ফলে নদীতে মাছ মরে ভেসে উঠছে। গত দুই দিন ধরে এ অবস্থা লক্ষ্য করছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, নরসিংদীর মাধবদীসহ আড়াইহাজার অংশে হাঁড়িধোয়া নদীতে দুই পারের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্জ্য নির্গত করা হচ্ছে বেশি পরিমাণে। ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায়।
লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, দুইদিন ধরে নদীর পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। কলকারখানার দূষিত বর্জ্য ও বাজারের ময়লা-আবর্জনায় দূষিত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আড়াইহাজারের হাঁড়িধোয়া নদীতে একসময় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বসবাস ছিল। নদীর পানি ব্যবহার হতো কৃষিকাজে। বর্তমানে কলকারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যে নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি। প্রতিনিয়তই বাড়ছে দূষণ। হাঁড়িধোয়ার স্বচ্ছ পানি এখন আলকাতরার মতো কালো রং ধারণ করেছে। কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ও বাজারের পরিত্যক্ত আবর্জনা-ময়লা প্রতিনিয়ত মিশছে নদীতে। যার কারণে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে আছে একসময়ের খরস্রোতা হাঁড়িধোয়া নদী। মিল ফ্যাক্টরির মালিকরা অবাধে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষিত করছে নদীর চারপাশের পরিবেশ।
হাঁড়িধোয়া নদীর বিশনন্দীর মেঘনা ঘাট থেকে শুরু করে খাগকান্দা মেঘনা ঘাটে গিয়ে শেষ হয়েছে। নদীর দু'পাশে রয়েছে অনেকগুলো গ্রাম- বিশনন্দী, গাজীপুরা, কড়ইতলা, শরিফপুর, চৈতনকান্দা, দয়াকান্দা, গোপালদী, দাইরাদী, রামচন্দ্রদী, খাসেরকান্দি, গহরদী, উচিৎপুরা, রায়পুরা, জাঙ্গালিয়া বাজার অংশের চারপাশ থেকে নদীতে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। নদীর দুই পাশ পরিণত হয়েছে বিশাল বর্জ্যের স্তূপে। যার কারণে জনজীবন আজ বির্পযস্ত।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহফুজ বলেন, 'ছোটবেলায় আমরা এই নদীতে মাছ শিকার ও গোসল করেছি। বর্তমানে নদীটি দূষণের ফলে সব ঐতিহ্য হারিয়েছে। আশপাশের বিভিন্ন কলকারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য প্রতিদিনই নদীতে নামছে। তাছাড়া নদীর পাড়ে বসবাসরতরা নিজেদের ঘরবাড়ির আবর্জনা ফেলছে নদীতে। তিনি আরও জানান, হাঁড়িধোয়া নদীর পানি থেকে এখন প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়ায়। দুর্গন্ধের কারণে নদীর পার দিয়ে হাঁটাচলা কষ্টকর। যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ঘরবাড়ির ময়লা-আবর্জনা। হাঁড়িধোয়া নদী এখন ময়লার ভাগাড়।'
কড়ইতলার মজিবুর বলেন, হাঁড়িধোয়া নদীটি একসময় মিঠা পানির মাছের জন্য পুরো আড়াইহাজারে খুব বিখ্যাত ছিল। এ নদীর মাছ ছিল খুব সুস্বাদু। রুই, কাতলা, মৃগেল, পুঁটি, চিতল, বোয়াল, মলা-ঢেলা, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ এ নদীতে পাওয়া যেত। সবাই দলবেঁধে এসে মাছ ধরতাম। একসময় নদীর পাড়ে বসে মানুষ আড্ডা দিত। কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। তিনি আরও বলেন, ময়লা-আবর্জনা নদীকে শেষ করে দিয়েছে। তা ছাড়া এ পানি আগে মানুষ কৃষিকাজে ব্যবহার করত। কিন্তু পানি দূষণের কারণে নদীর আশপাশ এলাকায় কৃষিকাজে এ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে পানির অভাবে দেখা যায় অনেক জমি চাষ করা বন্ধ রয়েছে।
হাঁড়িধোয়া নদীর পানি নষ্ট করছে কিছু ডাইং ফ্যাক্টরি। এসব কারখানার ওয়েস্টেজ নদীতে ফেলে এবং বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত পানি নদীতে মিশ্রিত হয়ে দূষণ করছে প্রচন্ডভাবে। তা ছাড়া নদীটি নরসিংদী জেলার খড়িয়া, মাধবদী হয়ে আড়াইহাজারে বহমান। এতে নরসিংদী জেলার বর্জ্য পানিতে মিশেও নদীটি বিষাক্ত ও দূষিত হয়েছে। শিক্ষাবিদ আব্দুলস্নাহ বলেন, সচেতনতাই ফিরিয়ে আনবে এ হারানো ঐতিহ্য। নদীর আশপাশের কলকারখানাগুলো ময়লা ফেলার বিষয়টি সঠিক মনিটরিং, পরিবেশ সচেতন এবং পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই নদীটিকে বিশুদ্ধ আকারে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। নতুবা জনভোগান্তি আরও চরম আকার ধারণ করবে।
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহাম্মেদ বলেন, 'বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। ব্যবস্থা নেব।'